বরগুনার পাথরঘাটায় ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এতে প্রায় পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫৫০টি আংশিক ও ১৩৫০ টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও মৌসুমে ফসল ও মাছের ঘেরের ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান খান। এ ছাড়াও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ২০টি গ্রাম।
গতকাল রোববার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় রিমালের তাণ্ডব চলে আজ সোমবার বেলা সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত। এর আগে গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি শুরু হয় এই এলাকায়। ঘূর্ণিঝড়ের এ তাণ্ডবের সময় পাথরঘাটার বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে বহু গাছপালা। বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি বসত ঘরের ওপর গাছ পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি।
পাথরঘাটা পৌর এলাকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এত দীর্ঘ সময় ধরে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব এর আগে আর কখনো দেখিনি। প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল তাণ্ডব চালিয়েছে। আমরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।’
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের হরিণঘাটা মুজিব কেল্লায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া এলাকার ইয়াসিন আকন বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। কিন্তু দুপুরেও ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব কমেনি। তাই আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছি। বাড়িঘরে কি অবস্থা এখনো খোঁজ নিতে পারিনি।’
চরলাঠীমারা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, ‘রোববার দুপুরের জোয়ারের পানিতেই আমাদের এলাকার বেড়িবাঁধের বাইরের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এর আগে শনিবার রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয় পাথরঘাটায়। বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে ঘরের সব মালামাল পানিতে ভিজে গেছে। একারনে দুই দিন ধরে কোনো রান্না হয়নি এ এলাকার বাসিন্দাদের।’
পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিডরের পর এমন ঘূর্ণিঝড় আর দেখিনি। পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।’
পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাথরঘাটায় সাড়ে তিন হাজার পুকুর ও শতাধিক ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত তালিকা করা সম্ভব হয়নি। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।’
বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, পাথরঘাটায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানান হয়েছে। তিনি শিগগিরই পাথরঘাটা পরিদর্শনে আসবেন। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি।