কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ২০০ বছর ধরে চলে আসা রাস উৎসবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তীর্থযাত্রীদের ঢল নেমেছে। পুণ্যার্থীদের আগমনে ভরপুর কুয়াকাটার রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের প্রাঙ্গণসহ কুয়াকাটার আশপাশ।
আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে দুই কিলোমিটার ও পশ্চিমে এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে লোকে লোকারণ্য। সকাল থেকেই সনাতন ধর্মের লোকেরা ধর্মীয় আচার পালন করার জন্য রাধাকৃষ্ণ মন্দির এবং আশপাশে আসন পেতে বসতে শুরু করছে।
রাস উৎসবে অংশগ্রহণ করা সৌমির চন্দ্র বলেন, ‘সারা বছর অপেক্ষা করি এদিনটির জন্য। আমি পাঁচ বছর ধরে স্নানে আসি এবং আমি আমার মানত করা পূজা দিই গঙ্গায়। যাতে গঙ্গা মা আমাকে মঙ্গল করে।’
কুয়াকাটা রাসপূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পুরোহিত ইঞ্জিনিয়ার নিহার রঞ্জন মন্ডল বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় পূজার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর রাতভর চলবে নাম কীর্তন, ভাগবৎ পাঠ ও আরতি। শ্রীকৃষ্ণের লীলা কীর্তনে অংশগ্রহণ করবেন ভারতের কবিতা ঘোষ।’
তিনি আরও বলেন, গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে রাস উৎসব। আগামীকাল শনিবার সূর্যোদয়ের আগেই রাস পূর্ণিমা লগ্ন অনুযায়ী সাগরসৈকত কুয়াকাটায় পাপ মোচনের লাভের আশায় নামবে ভক্তদের ঢল। একই দিন সৈকতে অনেকেই আবার ভিন্ন ভিন্ন মানত করা পূজা দেবেন পুরোহিত এনে। নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষও মিলিত হবে রাস পূজা, সমুদ্র স্নান অনুষ্ঠানে।
কুয়াকাটা রাসপূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি কাজল বরণ দাস বলেন, এ বছরও পূর্ণিমা তিথিতে হাজারো তীর্থযাত্রীর পদভারে মুখরিত হচ্ছে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা। ১৫ নভেম্বর সকাল ৫টা ৪৩ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণিমা, থাকবে শনিবার বেলা ৩টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত। তাই প্রতিবছরের মতো এবারও পূর্ণিমার এ তিথিতে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পাপ মোচন ও পুণ্য লাভের আশায় পূর্ণিমা তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ কুয়াকাটায় সমুদ্রে পুণ্যস্নান করবেন।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মো. হাবীবুর রহমান বলেন, ‘গতকাল থেকেই পুরো কুয়াকাটা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। কোনো দুষ্কৃতকারী যেন সমস্যা না করতে পারে, সে বিষয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সজাগ রয়েছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শত বছর ধরে চলে আসা রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে আমরা ধারণা করছি তিন লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে। কুয়াকাটায় পুণ্যস্নানে আগত পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা, উপজেলা ও পৌর প্রশাসনের সমন্বয়ে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে।’
এ ছাড়া সার্বক্ষণিক থানা-পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং গ্রাম পুলিশসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন।