ঝড়ের আগের রাতে গিয়েছিলেন আশ্রয়কেন্দ্রে। ফিরে এসে দেখেন সব তছনছ। ঘূর্ণিঝড় মোখায় ভেঙেছে ঘর। ঘরের সামনে পড়ে আছে গাছ। পরিবারের সদস্যরা তাই ভাগ হয়ে কেউ ঘর মেরামতের কাজে লেগে গেলেন, কেউ আবার গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কার করছেন। আজ সোমবার রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে টেকনাফের উত্তর চৌধুরীপাড়া জেটিঘাটে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেল।
ঘূর্ণিঝড় মোখা অতিক্রমের পর এক রাত পেরিয়ে গেছে। সকাল হতে না হতে আবার কর্মব্যস্ত জীবনে ফিরতে শুরু করেছে টেকনাফবাসী। তবে সমস্যায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের মাঝি ও জেলেরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের যাঁদের জীবনের সঙ্গে সাগর এবং নৌকা জড়িয়ে আছে, তাঁরা বলছেন উপকূলে অবস্থানের কারণে তাঁদের ঘরবাড়ি ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাগরে যাওয়ার অনুমতি না মেলায় হয়ে পড়েছেন অসহায়।
টেকনাফের উত্তর চৌধুরীপাড়া জেটিঘাটের মাঝি মোহাম্মদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঝড়ের দুই দিন আগেই বাচ্চা ও পরিবার নিয়ে তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন পলিথিনে মোড়ানো বাড়ি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
আলম বলেন, ‘এখন বাড়ি মেরামত করছি। তবে টাকার অভাবে ঠিকমতো সেটিও করতে পারছি না। সাগরে যেতে অনুমতি মিলছে না এখনো প্রশাসন থেকে। নিজের নৌকা জেটিঘাটে বাঁধা আছে।’
সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা মোহাম্মদ আমানুল্লাহ ঝড়ের দুই দিন আগে নিজের ট্রলারে করে টেকনাফ এসেছিলেন। পরিবারের অর্ধেক সদস্য সেন্ট মার্টিন আর বাকি অর্ধেক টেকনাফে। তবে ঝড় শেষে এখনো সেন্ট মার্টিনে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারেননি তিনি।
আমানুল্লাহ বলেন, সেন্ট মার্টিনে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। সেখানে তাঁর ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। তবে সাগরে কোনো জাহাজ বা ট্রলার চলাচল না করায় তিনি যেতে পারছেন না। অনুমতি পাওয়ার পরই তিনি সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে রওনা হবেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল দুপুর ১২টার পর ১২১ কিলোমিটার গতিতে টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। আর সকাল ১০টার পরই ১৪৭ কিলোমিটার গতিতে সেন্ট মার্টিন অতিক্রম করে মোখা।
এখনো কক্সবাজার উপকূলে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত জারি রয়েছে। সংকেত না নামা পর্যন্ত সাগরে চলাচল বন্ধ থাকবে।
স্থানীয় প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, উপজেলায় প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়েছে। সড়কে গাছ পড়েছে। আর শুধু সেন্ট মার্টিনে ১২০০ স্থানীয় পরিবারের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে টেকনাফের যোগাযোগ শুরু হয়েছে। ঘরবাড়ি মেরামত চলছে। এখন সব ঠিক আছে।
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে স্বাভাবিক যোগাযোগ শুরু হয়েছে। এখন কোনো সমস্যা নেই। তবে পরিস্থিতি বুঝে সাগরে চলাচল করতে হবে।
আরও পড়ুন: