চারদিকে যখন প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসের উৎসব, ঠিক সেই মুহূর্তেই প্রকৃতিকে রঙে রাঙাতে বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধার করে ফ্লাওয়ার পার্ক করেছে জেলা প্রশাসন। প্রকৃতির অপরূপ মেলবন্ধন সৃষ্টি করা এ পার্ক জেলা প্রশাসনের একটি অনন্য উদ্যোগ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
আজ শুক্রবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট বন্দর সংযোগ সড়কে গড়ে তোলা ফ্লাওয়ার পার্কে ফুল উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় চট্টগ্রামের পাহাড়ের চূড়ায় সুদৃশ্য বাংলো দেখা যেত। আজকাল বাংলো তো দূরের কথা, পাহাড়ও দেখা যায় না। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানও পাহাড় কেটে শেষ করছে। ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডটি তৈরিতেও নির্বিচারে পাহাড় কাটা হয়েছে। অথচ পাহাড় না কেটেও পাহাড়ের ঢাল উপযোগী করে রাস্তা করা যেত। কিন্তু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তা করেনি। সিডিএকে আমিসহ দাঁড়িয়ে থেকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করিয়েছি।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘একটি শহরকে নান্দনিক করতে হলে প্রকৃতির সঙ্গে উন্নয়নের সমন্বয় করতে হয়। চট্টগ্রামকে এখনো নান্দনিক রাখার সুযোগ আছে। এই জায়গা পুনরুদ্ধার করায় আমি জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করব, এখানে প্রতিবছর তিন মাসব্যাপী পুষ্পমেলা হবে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এখানে পুষ্পমেলা করা হলে এই শহর আরও নান্দনিক হবে।’
দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ১৪ বছরে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। চট্টগ্রামে হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সড়ক টানেল। অন্য জায়গায় টানেল আছে, কিন্তু সেটি রেল টানেল। সড়কের কোনো টানেল নেই। দেশে রেলের উন্নয়ন হয়েছে। মেট্রোরেলের পর পাতালরেল হচ্ছে। আর এই যে ফৌজদারহাট-বন্দর মেরিন ড্রাইভ সড়কটিও চার লেনের কাজ শুরু হবে।
বিশেষ অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘অবৈধ দখলে থাকা খাসজমি সরকার উদ্ধার করে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করেছে। এই ফুলের বাগানে সাধারণ জনগণ নির্মল বায়ু সেবন করবে। রাজনৈতিক নেতারা জনগণের স্বার্থে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের এসব সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়েছেন।’
উপমন্ত্রী বলেন, ‘খালি জায়গা থাকলে দোকান ও বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে যাচ্ছে। আর সেই দোষের শিকার হচ্ছি আমরা। ফুল দেখে শেখার অনেক কিছু রয়েছে। শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা এই ফুল দেখে নানাভাবে শিখবে। এই ফুল বাগান পুরো একটি শিক্ষা পার্ক হিসেবে রূপান্তর হবে। এই রকম পার্ক চট্টগ্রামে আরও হবে বলে জানান তিনি। এ রকম উন্মুক্ত পার্ক হলে অর্থনৈতিকভাবে এলাকার মানুষ এগিয়ে যাবে।’
উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আব্দুল মালেক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. আবু রায়হান দোলন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট-বন্দর লিংকের জায়গাটি কিছুদিন আগেও অবৈধ দখলে ছিল। পরে জেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ১৯৪.১৩ একর খাসজমি উদ্ধার করে সেখানে দৃষ্টিনন্দন ফ্লাওয়ার পার্ক গড়ে তোলে। আজ থেকে পার্কে শুরু হয়েছে ফুল উৎসবের। চলবে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।