উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে না গিয়েই চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এভাবেই বেতন তুলছেন রামগতি উপজেলার দুই উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার (সেকমো)। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে দুটিই দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে তালাবদ্ধ। প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে চরগাজী ও চর পোড়াগাছা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গেলে দেখা যায় এমন চিত্র। দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্র দুটি তালাবদ্ধ। চরগাজী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সোহরাব হাওলাদার সুজন সেকমোর দায়িত্বে থাকলেও তিনি একবারের জন্যও কর্মস্থলে যাননি। ২০১৯ সাল থেকে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকলেও তিনি বাড়িতে বসে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন।
একই অবস্থা চর পোড়াগাছা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেকমোর দায়িত্বে থাকা রাসেল আমিন বাবুর ক্ষেত্রেও। তিনিও ২০১৯ সাল থেকে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছেন। একদিনও দায়িত্বপালন না করে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন তিনিও।
আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে রামগতি উপজেলার গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ছয়টি, উপকেন্দ্র দুটি ও ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বে থাকা সেকমো, ভিজিটর ও স্বাস্থ্য কর্মীদের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন এ এলাকার মানুষ।
চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ক্ষিপ্ত ওই ইউনিয়নের রোগীরা। রোগীদের অভিযোগ, দুই উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার মাঝেমধ্যে আসেন, কিন্তু রোগীদের সেবা দিতে নয়, আসেন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে।
চরগাজী ইউনিয়নের বাসিন্দা রাশেদ উদ্দিন জানান, ‘চরগাজী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার (ডিএমএফ) সোহরাব হোসেন দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে অবহেলা করছেন। প্রতিদিন কর্মস্থলে না এসে মাসের উনত্রিশ তারিখে নামমাত্র উপস্থিত হয়ে বেতন-ভাতা তুলে নিয়ে যান। উপজেলা ও জেলা কর্মকর্তাকে অবহিত করেও এখন পর্যন্ত সুফল পাইনি।’
এ বিষয়ে চরগাজী ও চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন জানান, ‘জনবল সংকটের কারণে তৃণমূল পর্যায়ে পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া চরগাজী ও চর পোড়াগাছা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা দুজন সেকমো দুই বছরের বেশি সময় ধরে কর্মস্থলে থাকছেন না। তাঁদের বেতন বন্ধ রাখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানালেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’
দুই সেকমো’র দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক ডা: আশফাকুর রহমান মামুন বলেন, ‘বহুবার তাঁদের শোকজ করা হয়েছে। কয়েকবার বেতন বন্ধ করা হয়েছিল, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, আবারও এ বিষয়ে লিখব।’
সিভিল সার্জন আহমেদ কবীর বলেন, ‘সেকমোদের নিয়ন্ত্রণ করে মূলত পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এফডব্লিওসি থাকা সত্ত্বেও চর পোড়াগাছা ও চরগাজী ইউনিয়নের খেটে-খাওয়া মানুষগুলো দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দায়িত্বে অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে দেশের নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্য সেবা সুনিশ্চিত করবে।