হোম > সারা দেশ > চট্টগ্রাম

তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর আড়াই কোটির ফ্ল্যাট

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম

রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী মো. ইয়াকুব তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। একই সঙ্গে তিনি শ্রমিক লীগ নেতাও। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে সিবিএর সাধারণ সম্পাদক ও গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিবের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন। 

দেশের যেসব স্থানে উড়োজাহাজে যাওয়া যায়, সেসব স্থানে গেলে ইয়াকুব সাধারণত উড়োজাহাজেই চড়েন। বিদেশে ট্যুরও করেন হরহামেশা। মাসিক ৩৪ হাজার টাকা বেতন জ্যেষ্ঠ সহকারী মো. ইয়াকুবের। কিন্তু স্যালারি অ্যাকাউন্টে পৌনে ৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ব্যাংক এশিয়া কর্তৃপক্ষ তাঁর হিসাবটিকে সন্দেহজনক অস্বাভাবিক লেনদেন (এসটিআর) হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আর ইয়াকুব থাকেন ৪ হাজার ৩০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটে; যার মূল্য ২ কোটি ৫৮ লাখ টাকার বেশি। 

গত ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও এই শ্রমিক লীগ নেতা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। 

যমুনা অয়েল কোম্পানি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন ইয়াকুব। তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তাঁর চাকরি স্থায়ী হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

যমুনা অয়েল কোম্পানির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারীরা জানান, ইয়াকুবের বিলাসবহুল বাড়ি, দামি গাড়ি, জমিসহ বহু সম্পত্তি রয়েছে। তিনি এখন বহু টাকার মালিক। তাঁর বিরুদ্ধে যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। 

এদিকে ইয়াকুবের অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৪ সালেও একবার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) তাঁর এসব অপকর্মের তদন্ত শুরু করেছিল; কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা চাপা পড়ে যায়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন, ইয়াকুবের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তাঁর এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।

ইয়াকুবের মতের বাইরের লোকজনের চাকরিচ্যুতির ঘটনাও ঘটেছে। সূত্র জানায়, ইয়াকুবের সহকর্মী বিশ্বজিৎ চৌধুরী, ইফতেখার কামাল খান ও মো. কামরুজ্জামান লিটনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাঁদের মধ্যে কামরুজ্জামান লিটন মারা গেছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজার ৩৩, হাই লেভেল রোডে (মানারাত ইদ্রিস প্যালেস) চার হাজার ৩০০ বর্গফুটের তিনটি ফ্ল্যাট কেনেন ইয়াকুব। পরে তিনটি ফ্ল্যাটকে একটি বানিয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। 

মানারাত ইদ্রিস প্যালেস নির্মাণকারী মানারাত অ্যাসেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এ প্রজেক্টে ইয়াকুব সাহেব যে ফ্ল্যাট কিনেছেন তার তিনটিকে একটি করা হয়েছে। এখানে মোট ৪ হাজার ৩০০ বর্গফুট। ফ্ল্যাটটি মারিয়া সুলতানা হ্যাপির কাছ থেকে কিনেছেন তিনি।’ 

ফখরুল ইসলাম আরও জানান, বর্তমানে এই এলাকায় প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের মূল্য ৬ হাজার টাকার বেশি। সে হিসাবে ইয়াকুবের ফ্ল্যাটটির মূল্য আড়াই কোটি টাকার বেশি। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে ইয়াকুবের ২ গন্ডা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। পতেঙ্গায়ও ৩ গন্ডা জমি আছে। আর গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালীর বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে ইয়াকুবের নামে-বেনামে জমি রয়েছে। 

যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে ইয়াকুবের বিরুদ্ধে। 

যমুনা অয়েলের জ্যেষ্ঠ সহকারী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মো. এয়াকুব এতটাই প্রভাবশালী যে, তাঁর কথামতো যমুনা অয়েল কর্তৃপক্ষ আমাদের বেতন থেকে টাকা কেটে নিয়েছিল। গত বছর (২০২৩ সালে) আমাদের ওয়েলফেয়ার ফান্ড থেকে টাকা ফেরত দেবে বলে প্রত্যেক কর্মচারীর বেতন থেকে ১ হাজার করে কেটে নেওয়া হয়।’ 

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাকে পাঁচবার বদলি করিয়েছেন ইয়াকুব। অপারেটর আব্দুল মতিনকে ৫-৬ বার বদলি করিয়েছেন।’ 
যমুনা অয়েলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) মো. হাসান ইমাম বলেন, মো. ইয়াকুব ওয়েলফেয়ার ফান্ড থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে গেছেন। এখনো সেই টাকা ফেরত দেননি। 

অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা ইয়াকুব ২০১৯ সালে কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। 

চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরিপ্রার্থীদের নানা ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ইয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া। 

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কুদরত-এ-খুদা বলেন, ‘আমি নতুন আসছি। এ বিষয়ে তেমন কোনো কিছু জানি না।’ 

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার বলেন, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইয়াকুবের বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। 

অভিযুক্ত মো. ইয়াকুবকে ফোন করে প্রথমে ৪ হাজার ৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কেনার কথা বলতেই তিনি লাইন কেটে দেন। এরপর কয়েকবার ফোন ও এসএমএস দিয়েও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি। অবশ্য অন্য কয়েকজন সাংবাদিক দিয়ে প্রতিবেদন না করার অনুরোধ জানান তিনি।

পরে গতকাল রোববার দুপুরে আগ্রাবাদ যমুনা অয়েল ভবনে গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) সাইয়েদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ইয়াকুব আসেননি। ছুটিতে আছেন কি না তাও জানাতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।

আরও খবর পড়ুন:

চট্টগ্রামে পাহাড়ের জমি থেকে দখলদার উচ্ছেদ

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প পরিদর্শনে তিন উপদেষ্টা

৩৪ মাস ধরে পরিত্যক্ত ভবনে ইউএনও, রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

টেকনাফের পাহাড়ে আবারও বন্য হাতির মৃত্যু

দুর্নীতিবাজ-খুনিদের সংসদ ও রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত না করার সুপারিশ করা হয়েছে: বদিউল আলম

মাদক কারবারে জড়িত পুলিশের এএসআইসহ ২ জন গ্রেপ্তার

নাফ নদ থেকে পণ্যবাহী ৩ জাহাজ নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

মেয়র হতে পারায় প্রয়াত উপদেষ্টা হাসান আরিফের প্রতি কৃতজ্ঞ ডা. শাহাদাত

বান্দরবানে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

চকরিয়ায় গৃহবধূ হত্যার ঘটনায় ৫ জনের নামে মামলা, স্বামী গ্রেপ্তার

সেকশন