আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের মামলায় আসামিদের পক্ষে বাইরের আইনজীবী আদালতে দাঁড়ালে বাধা দেবেন না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, আইনজীবী থাকবে না-এমনটা বলিনি। তবে আসামিপক্ষে দাঁড়িয়ে কেউ যেন না বলে আসামি নির্দোষ।
আজ সোমবার বিকেল ৩টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এসব বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমিতো বলিনি বাইরে থেকে আইনজীবী এনে দাঁড় করাতে পারবে না। তবে হত্যা মামলার একটি নিয়ম আছে। হত্যা মামলার বিচার যখন চলবে তখন আদালত নিজেই একজন আইনজীবী নিয়োগ করবেন আসামিপক্ষে। এটাকে ‘স্টেট ডিফেন্স’ বলে।
নাজিম উদ্দিন আরও বলেন, যিনি মারা গেছেন তিনি (আলিফ) আমাদের সমিতির সদস্য, তাই আমরা মনে করি তাঁর রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আসামিপক্ষে দাঁড়িয়ে কেউ আসামি নির্দোষ এটা যেন না বলে সেই অনুরোধ করেছি। জেলা আইনজীবী সমিতির কেউ আসামিপক্ষে লড়াই করলে তা হবে আলিফের রক্তের সঙ্গে বেইমানির শামিল। আইনজীবী থাকবে না-এমনটা বলিনি।
সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় অনেক আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা আতঙ্কে আদালতে যাচ্ছেন না। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সমিতির সভাপতি বলেন, কোনো আইনজীবীকে নাজেহাল করা হয়েছে, আদালতে যেতে দেওয়া হয়নি কিংবা হামলা করা হয়েছে-এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। স্বাভাবিকভাবে কেউ যদি না আসে এটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। আমি শুনেছি, মামলাটির আসামিদের মধ্যে যাদের নাম এসেছে তাঁদের অধিকাংশই আদালতে মামলা লড়ছে।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক লিখিত বক্তব্যে আইনজীবী আলিফ হত্যায় সব সন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচার, চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে সব মামলায় অন্যতম আসামি করাসহ ১১ দফা দাবি জানান। সমিতির দাবিগুলো হচ্ছে মসজিদ, আইনজীবী চেম্বার, গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারকরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, হত্যা মামলাটিতে চার্জশিট প্রদান করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা, আলিফ হত্যাকারীদের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে মামলা পরিচালনা না করার অনুরোধ, সহিংসতার দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তায় থাকা জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না করে অপপ্রচার ও চক্রান্ত থেকে বিরত থাকার জন্য দেশি-বিদেশি মহলের প্রতি আহ্বান, নিরপরাধ কোনো ব্যক্তিকে হয়রানি না করা, আদালত অঙ্গনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও আদালত অঙ্গনে সুদীর্ঘকালের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্প্রতি বজায় রাখা ও সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আলিফ হত্যাকাণ্ড একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। ঘটনার দিন আদালত অঙ্গনে দীর্ঘসময় চিন্ময় দাশকে প্রিজন ভ্যানে রাখা হয় এবং তিনি প্রিজন ভ্যান থেকে হ্যান্ডমাইক দিয়ে তাঁর অনুসারীদের উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত হয়।
মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, আলিফ হত্যাকাণ্ড ঘিরে একটি স্বার্থান্বেষী মহল আদালত এলাকাসহ দেশব্যাপী একটি বিশৃঙ্খল ও অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করে আসছে। আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়ে আইনজীবীদের সজাগ থাকতে হবে।