কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতালে গত ২৮ মার্চ রাত সাড়ে ৯টায় সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্ম নেয় একটি ছেলেশিশু। জন্মের পর দেখা যায় শিশুটির মাথা অস্বাভাবিক মোটা এবং ঠোঁট ও তালু কাটা। চিকিৎসাবিদ্যার ভাষায় যাকে বলে হাইড্রোক্যাফালাস, ক্লেপ্ট লিফ ও ক্লেপ্ট পেলেট।
জানা যায়, জন্মের পরপরই শিশুটিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হয়। তবে শিশুটির এই অস্বাভাবিক অবস্থার কথা শুনে তার বাবা-মা একবারের জন্যও দেখতে আসেননি। বরং তাকে নিতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁরা চিকিৎসকদের জানান, এই বাচ্চা দেখলে তাদের অকল্যাণ হবে। শিশুটি জন্মের চার দিন পর গত ১ এপ্রিল তাকে ফেলে রেখে তার মা হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এ অবস্থায় এগিয়ে আসেন হাসপাতালে কর্মরত বিদেশি চিকিৎসক টিমের সদস্যরা।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং বলেন, এ ঘটনা জানার পর বিদেশি চিকিৎসক টিমের সদস্যরা হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে আসেন এবং দায়িত্ব নেন। জন্মের দিন সারা রাত শিশুটিকে কোলে নিয়ে বসে থাকেন চিকিৎসক দলের এক গৃহিণী সারা নুল। এই দলের অন্যতম চিকিৎসক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আমেরিকার চিকিৎসক ডা. এলিজাবেথের তত্ত্বাবধানে শিশুটির চিকিৎসা কার্যক্রম চলতে থাকে।
সরেজমিনে আজ বুধবার সকালে হাসপাতালের ৭ নম্বর কেবিনে শিশুটিকে দেখতে গেলে দেখা যায়, ডা. এলিজাবেথ শিশুটিকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত মানবিক কারণে আমরা শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছি। এরই মধ্যে তার অপারেশনের জন্য আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। রিপোর্ট হাতে এলে আমরা অপারেশনের ব্যবস্থা করব।’
ডা. এলিজাবেথ আরও বলেন, এটি একটি জটিল অপারেশন। তবে তিন মাসের আগে এই চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে না। আমরা আশা করছি, অপারেশনের পর শিশুটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’
হাসপাতালের নার্সদের মাধ্যমে জানতে পেরে শিশুটির দায়িত্ব নিতে হাসপাতালে ছুটে আসেন চট্টগ্রামের ব্যাটারি গলির মিনু বারিকদার। তিনি বলেন, ‘আমি নিজ সন্তানের মতো করে শিশুটিকে লালন-পালন করব।’
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বিলাইছড়ি উপজেলার ৩ নম্বর ফারুয়া ইউনিয়নের ধোপাছড়ি গ্রাম থেকে উপজাতি দম্পতি হাসপাতালে আসেন। পরে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।