ইসমাইল হোসেন কিরন, হাতিয়া (নোয়াখালী)
কেউ তুলছেন সেলফি, কেউ গ্রুপ ছবি। কেউ চিপস খাওয়াচ্ছেন, কেউ আবার হাতে চিপস নিয়ে অপেক্ষা করছেন খাওয়ানোর জন্য। কেউ আবার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করছেন। এভাবে ‘বিজলীকে’ নিয়ে আনন্দে মেতে থাকেন হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা। সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু বিজলী।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় জায়গা নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা এ দ্বীপে বেশ কিছু পর্যটনস্থান রয়েছে। বেশ বড় একটি ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে এ দ্বীপটিতে। গত কয়েক বছরে দ্বীপটি ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্র। আর এখানে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ চিত্রা হরিণ। বনের ভেতরে গেলে দেখা মেলে হরিণের, যদিও সেটি সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। তবে নিঝুম দ্বীপে আসা পর্যটকেরা বনের ভেতরে হরিণ যদি দেখতে নাও পান তাঁদের মুগ্ধ করে হরিণ ‘বিজলী’। যেটি লোকালয়ে এসে মানুষের সঙ্গে সময় কাটায়।
সম্প্রতি বেসরকারি একটি টেলিভিশনে কর্মরত বেশ কয়েকজন ঘুরতে আসেন এই দ্বীপে। তাঁদের মধ্যে একজন মো. সেলিম (৪৫) জানান, নিঝুম দ্বীপে বনের হরিণ দেখার জন্য এসেছেন। কিন্তু সময়স্বল্পতার কারণে বনের মধ্যে হরিণ দেখা সম্ভব হয়নি। রাতে একটি রেস্টহাউসে ঘুমানোর পর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন রেস্টহাউসের মাঠে একটি হরিণ কুড়িয়ে কুড়িয়ে খাচ্ছে । মুহূর্তে দৌড়ে এসে সবাই সেই হরিণের সঙ্গে ছবি তোলেন। তাতে হরিণ দেখার আসা পূরণ হয়।
নিঝুম দ্বীপের ঈশিতা রেস্টহাউসের পরিচালক মো. আরিফ বলেন, প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে এই হরিণটি রেস্টহাউসের সামনে আসে। তাতে পর্যটকেরা আনন্দ পান। অনেকে হরিণটি কাছে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। অনেকে খাবার খাওয়ান নিজ হাতে। মানুষের কাছে গিয়ে চিপস, শিঙাড়া, কলা, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের খাওয়া খেয়ে আবার বাগানে ফিরে যায় সে।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সালে নিঝুম দ্বীপের ছেওয়াখালী এলাকা থেকে শিয়ালের আক্রমণে আহত হওয়া একটি হরিণ উদ্ধার করে স্থানীয় বন বিভাগ। পরবর্তীতে চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তোলা হয়। বন বিভাগ হরিণটির নাম রাখে ‘বিজলী’। বন বিভাগের যত্নে সে অনেকটা গৃহপালিত পশুর মতো হয়ে গেছে। বিজলী বনে ফিরে গেলেও বন বিভাগ ও স্থানীয় লোকজনের মায়ায় প্রতিদিন দুই বা তারও বেশি সময় চলে আসে লোকালয়ে। সবার ভালোবাসার মধ্যমণি হয়ে সময় কাটানোতেই যেন তার আনন্দ।
বন বিভাগের জাহাজমারা রেঞ্জ কর্মকর্তা এম সাইফুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্য পশুর আক্রমণে প্রায় সময় হরিণ আহত হয়। কিন্তু এ দ্বীপে আহত হরিণদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় সময় হরিণগুলো মারা যায়। তাই এখানে হরিণের জন্য একটি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানাই।’