চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরে সিমেন্টের ব্লক তৈরির কারখানার মিক্সার মেশিনে ঢুকে পড়ে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে চকরিয়া পৌরশহরের তরছপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকির অভাব ও অবহেলায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার দেড় ঘণ্টা পর মরদেহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
নিহত দুই শ্রমিকের নাম হলেন চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘুনিয়া গ্রামের ওমান প্রবাসী মো. শাহজাহানের ছেলে শাহাদাত হোসেন শহীন (১৭) ও চকরিয়া পৌরসভার করাইয়াঘোনা এলাকার রুহুল কাদেরের ছেলে কামরানুল ইসলাম জিহান (১৮)।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জানান, সিমেন্টের ব্লক তৈরি কোনো অনুমতি ছাড়া চকরিয়া পৌরশহরে তরছপাড়া একটি কারখানা চালু করে ইঞ্জিনিয়ার কফিল উদ্দিন ও মাস্টার গিয়াস উদ্দিন। বিকেল ৫টায় শহীন ও জিহানসহ আরও ৬ জন কারখানার ডিউটি শেষ করে। এরপর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে সিমেন্টের ব্লক তৈরির মিক্সার মেশিন পরিষ্কার করতে যায়। জিহান মেশিনের ভেতর ও শহীন ওপরে দাঁড়িয়ে কাজ করছিল।
এ সময় অসাবধানবশত বৈদ্যুতিক সুইচ চালু হলে শহীন মেশিনের ভেতর পড়ে যায়। এরপর কারখানার মালিকপক্ষ তাঁদের হাসপাতালে না নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রমিকেরা তাঁদের দুজনকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে নিহত দুজনের পরিবার এসে তাঁদের লাশ শনাক্ত করে।
আমানপাড়া গ্রামের হামিদ হোসেন ও কামাল উদ্দিন বলেন, সিমেন্টের ব্লকের কারখানাটি চালু করার পর থেকে স্থানীয় লোকজন বসবাস করতে পারছে না। কারখানার মেশিনের তীব্র আওয়াজ, ধুলাবালি ও নদী থেকে বালি উত্তোলন করে পরিবেশের চরম ক্ষতি করছেন। আমরা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাইনি।
কারখানার দুজন শ্রমিক মোহাম্মদ মিরাজ ও মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, জিহান ও শহীন মিক্সার মেশিন পরিষ্কার করছিল। এ সময় হঠাৎ বৈদ্যুতিক সুইচ চালু হলে মেশিনের ভেতর দুজন মারাত্মকভাবে আহত হয়। আমরা হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত দুজনের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাকিম হোসাইন বলেন, দুজনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে।
নিহত শাহাদাত হোসেন শহীনের বাবা ওমানপ্রবাসী মো. শাহজাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমি দুই মাস আগে ওমান থেকে দেশে ফিরেছি। কিছুদিন আগে সিমেন্টের ব্লক তৈরির কারখানায় সে যোগ দেয়। আজ সন্ধ্যায় জানতে পারি, কারখানার মারা গেছে। মালিকপক্ষের অবহেলা ও তদারকির অভাবের কারণে আমার ছেলেসহ দুজন তরতাজা তরুণ মারা গেছে। এই ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
জিহানের বড় ভাই জাহেদুল ইসলাম ও বড় বোন তাসমিন আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ভাই ভুলবশত নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মারা গেছে— তা তদন্ত করতে হবে প্রশাসনকে।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে কারখানার মাস্টার গিয়াস উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ঘটনা শোনার পর হাসপাতালে একদল পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবার লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’