Ajker Patrika
হোম > সারা দেশ > চট্টগ্রাম

রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে পাঁচ মাসে ১৯ খুন

নুরতাজুল মোস্তফা, টেকনাফ (কক্সবাজার)

রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে পাঁচ মাসে ১৯ খুন

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে গত পাঁচ মাসে অন্তত ১৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বলছে,  এদের মধ্যে কেউ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় খুন হয়েছেন, কেউ খুন হয়েছেন মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব খুনের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, খুনিদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন রোহিঙ্গা নেতা ও ক্যাম্পে রাতে পাহারায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকেরা। একের পর এক হত্যাকাণ্ডে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাসিন্দারা। 

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রত্যাবাসন যত বিলম্বিত হচ্ছে, ততই অস্থির হয়ে উঠছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলো। ক্যাম্পকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেও খুনের ঘটনা ঘটছে। রাত নামলেই ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করছে আশ্রয় শিবিরগুলোতে। গত বছরের অক্টোবর থেকে চালু হয়েছিল স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে ক্যাম্পে পাহারার ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাকে অকার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট রোহিঙ্গা নেতা ও স্বেচ্ছাসেবীদের টার্গেট করে হামলার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। 

সর্বশেষ আজ বুধবার ভোরে বালুখালী ১০ নম্বর ক্যাম্পে মো. জসিম নামের এক রোহিঙ্গা যুবক একদল মুখোশধারীর হাতে নিহত হন। এর আগে ১৮ অক্টোবর উখিয়ার ১৯ নম্বর ক্যাম্পে খুন হন সৈয়দ হোসেন নামের আরেক রোহিঙ্গা যুবক, যিনি পিতা হত্যার ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য তৎপর ছিলেন। গত ১৫ অক্টোবর কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মো. আনোয়ার ও সাব মাঝি মৌলভি ইউনুসকে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারীরা। এভাবে গত পাঁচ মাসে অন্তত ১৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। 

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর কুতুপালংয়ের পাইন্নাশিয়া শিবিরে খুন হন রোহিঙ্গাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা মহিবুল্লাহ। তিনি রোহিঙ্গাদের দেশে প্রত্যাবাসনের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখছিলেন। এরপর ২১ অক্টোবর বালুখালীর ১৮ নম্বর শিবিরের একটি মাদ্রাসায় গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় ছয়জনকে। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখানে তৎপরতা বাড়ায়। এসব কারণে গত বছরের অক্টোবর থেকে ক্যাম্পে চালু হয় স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে পাহারার ব্যবস্থা। 

গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে খুন হয়েছেন অন্তত ১১৯ জন। এই সময়ে খুনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রায় আড়াই হাজার মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি হয়েছে ৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। 

১৪ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মো. হাসান জানান, নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন। শিবিরগুলোতে আরও নিরাপত্তা বাড়ানো উচিত বলেও মনে করেন তিনি। সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথাও বলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে অনেক রোহিঙ্গা নেতা মনে করেন, ক্যাম্পে যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা সহজ-সরল রোহিঙ্গা হতে পারে না। তারা মিয়ানমার সরকারের দালালও হতে পারে।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী ও পালংখালী ইউপি সদস্য নুরুল হকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারীদের কারণে স্থানীয়রাও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, কাঁটাতার থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা অবাধে যত্রতত্র বিচরণ করছে। তারা শুধু নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করছে তা নয়, নানা কারণে স্থানীয়দেরও খুন করছে। সম্প্রতি হোয়াইক্যং উচ্চ বিদ্যালয়ের দপ্তরি আব্দুর রশিদ, টেকনাফের আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক, আবুল হোসেনসহ স্থানীয় কয়েকজন খুন হয়েছেন। 

রোহিঙ্গা শিবিরে দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, ‘অবৈধভাবে টাকা আয়ের জন্য মাদক ব্যবসা, অপহরণ ও আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে দুষ্কৃতকারীরা রোহিঙ্গাদের খুন করছে। এ নিয়ে পুলিশ কঠোর রয়েছে এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এসব অভিযানে বেশ কিছু দুষ্কৃতকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারীদের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা নানা সমস্যায় জর্জরিত। যারা মাদক, হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে তালিকা তৈরি করে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।’ 

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে পাঁচ বছরে হত্যা, অপহরণ, মাদক কারবারসহ নানা অপরাধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৪৩৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৫ হাজার ২২৬ জনকে। 

কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। সেখানে তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও আধিপত্য নিয়ে খুনের ঘটনা ঘটছে। গত পাঁচ মাসে এখানে ১৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এখানকার প্রতিটি হত্যাকাণ্ড খুব গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। ক্যাম্পের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।’

চট্টগ্রামে ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততায় ক্যাবের উদ্বেগ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি: দুই মামলায় দুজন কারাগারে

কমলনগরে স্ত্রীর যৌতুক মামলায় কৃষি কর্মকর্তা কারাগারে

শিকার শেষে জবাই ৭০০ পাখি, তিনজন গ্রেপ্তার

কুমিল্লায় গোমতী নদীর মাটি কাটার অপরাধে ৭ ট্রাক জব্দ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হোমনা উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠন

রাউজানে অস্ত্রসহ দুই ব্যক্তি গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুরে টিসিবির পণ্য নিতে দীর্ঘ লাইন, কম দামে পেয়ে খুশি ক্রেতারা

নোয়াখালীতে ৯ দোকানে অভিযান, ১২ হাজার টাকা দণ্ড

নোয়াখালীতে স্বামী-স্ত্রী আটক, ২ হাজার ইয়াবা জব্দ