লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনায় জেলেদের জালে আশানুরূপ ইলিশ মিলছে না। ফলে শূন্য হাতে অনেক জেলে ডাঙায় ফিরছেন। প্রতিবছর এই সময়ে ইলিশ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকেন জেলেরা, কিন্তু এবার তার উল্টো চিত্র। এখন জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে পোয়া মাছ। জালভর্তি মাছ পাওয়ায় কিছু জেলের মুখে হাসি দেখা গেলেও অধিকাংশ জেলের মধ্যে ইলিশ মাছ কম পাওয়ায় হতাশা বিরাজ করছে। আজ শুক্রবার রামগতি উপজেলার রামগতির ঘাট, টাংকীর ঘাট, আলেকজান্ডার সেন্টার খাল ঘাট ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।
জানা গেছে, ঘাটগুলোতে বর্তমানে ইলিশ মাছের সংকটের কারণে ইলিশ আহরণ ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িত মেঘনা উপকূলের হাজার হাজার জেলে ও ব্যবসায়ী চরম হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। সুস্বাদু ইলিশ মাছ কেনার জন্য মানুষ বাজারে ভিড় জমালেও অতিরিক্ত দামের কারণে রামগতির উপকূলের সাধারণ মানুষ ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করতে পারছেন না। ওজনভেদে ১ কেজি ইলিশ ৬৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের এই মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
রামগতি বাজারে সারওয়ার নামে একজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘একটি ৭০০-৮০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ কিনতে চেয়েছিলাম। ইলিশ নাকি কম ধরা পড়ে, তাই দাম বেশি। কিন্তু এটা তো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। তবে পোয়া মাছ প্রচুর ধরা পড়লেও ৪০০-৬০০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে।’
রামগতি বাজারে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্রেতা ইলিশের দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে বড় ইলিশের দাম করে ২০০-৪০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এ সময় কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সমীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। বেশির ভাগ মানুষের কাছে ইলিশ এই মুহূর্তে বিলাসি খাদ্য। আমার মতো লোকও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি, দুইটা মাঝারি সাইজের ইলিশ কিনতে হাজার নাইলে বারো শ টাকা লাগবে। তাহলে আমার অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের কী হবে?’
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, স্বল্প পরিমাণ ইলিশ ঘাটে এলেও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত জেলে, আড়তদার, শ্রমিকসহ অনেকেই বসে বসে পুঁজির টাকা খরচ করছেন। অন্যদিকে ইলিশনির্ভর উপকূলীয় এলাকার মানুষের চোখে-মুখে এখন অভাবের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
রামগতি বাজারের বরফকলের মালিক মিলন জানান, ‘জেলেরা বরফ কিনতে না এলেও বরফ উৎপাদনের জন্য ইঞ্জিন সব সময় চালু রাখতে হয়। ফলে বরফ বিক্রি না থাকলেও বিদ্যুৎ বিল এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
তবে এই এলাকার একটি মহলের দাবি, নদীতে বিভিন্ন সময়ে অসাধু জেলেরা নিয়মিত জাটকা ধ্বংস করে নদীকে শূন্য করেছে।