আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
চাঁদপুরে জাহাজে সাত খুনের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের শুরু করা কর্মবিরতি গতকাল রাতে স্থগিত করা হয়েছে। শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নবী হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শিপিং করপোরেশনের ডিজির অনুরোধে কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পরে আরও বিস্তারিত জানানো হবে।
দুই দিনের কর্মবিরতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য ও জ্বালানি খালাস এবং তা স্থানীয় নদীপথে সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ ছিল। এর মধ্যে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৮৭টি মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) বন্দরে পণ্য খালাসের অপেক্ষা করছে। এতে প্রায় ১৫ লাখ টন পণ্য আটকা পড়ে। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় মোট ৭২টি মাদার ভেসেল বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাসের জন্য অপেক্ষা করে। এগুলোর মধ্যে অয়েল ট্যাংকার ১০টি, জেনারেল কার্গো ২৩টি, করটেইনার ১০টি, খাদ্যশস্যের ৮টি, সারের ৩টি, চিনির ২টি এবং সিমেন্টের ক্লিংকারবাহী ১৬টি জাহাজ রয়েছে।
নৌযান শ্রমিকদের দাবিগুলো হলো চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা, নৌপথের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া। কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আলোচনার উদ্যোগ না নেওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন শ্রমিকেরা।
শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নবী হোসেন জানিয়েছেন, কর্মবিরতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়ে নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর আজ রোববার শ্রমিকদের সঙ্গে বসার কথা বলেছে।
লাইটার জাহাজমালিকদের তিনটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের (বিডব্লিউটিসিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫৭টি ঘাটে ৭৩৮টি লাইটার জাহাজে আমদানি পণ্যবোঝাই অবস্থায় রয়েছে। কর্মবিরতির কারণে সেগুলো গন্তব্যে যেতে পারছিল না। এসব পণ্যের মধ্যে গম, মসুর ডাল, মটর ডাল, সয়াবিন বীজ, সার, কয়লা ও সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া, জ্বালানি তেলসহ দেশের সবগুলো বিমানবন্দরের বিমানের জন্য জেট-ফুয়েল পরিবহনও বন্ধ ছিল।
লাইটার জাহাজমালিক সংগঠন ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চট্টগ্রামের (আইভোয়াক) মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ বলেন, প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের পণ্য বোঝাই করে অন্তত ৩০টি লাইটার জাহাজ। প্রতিটি জাহাজে গড়ে ৬ হাজার টন করে ১ লাখ ৮০ হাজার টন পণ্য বোঝাই করা হয়। দুই দিনে ৩ লাখ ৬০ হাজার টন পণ্য মাদার ভেসেল থেকে আনলোড করা যায়নি।
এদিকে, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং এবিসি শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় জাহাজের যে ডেমারেজ উঠেছে, এই বাড়তি ব্যয় আমদানিকারককে বহন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমদানি করা পণ্যের দামে প্রভাব পড়তে পারে। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যে প্রভাবটা বেশি পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া কিছু পণ্য জাহাজে লোড করা আছে, সেগুলোও খালাস করা যায়নি।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে গতকাল পর্যন্ত বন্দরের বহির্নোঙরে ১৫ মাদার ভেসেল থেকে পণ্যের লাইটারিং ও পরিবহন বন্ধ ছিল। তবে বন্দরের অভ্যন্তরে স্বাভাবিক কাজকর্ম চলেছে।