ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চরমজলিশপুর গ্রামের আব্দুল হাই মেম্বারের বাড়ির জামাল উদ্দিন ও জান্নাতুল ফেরদৌস দম্পতির একমাত্র ছেলে আবুল হোসেন (৩২) ও নাতি নাদিম হোসেন (১০)।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপটাউনে লরিচাপায় যে পাঁচ বাংলাদেশি প্রবাসী নিহত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে এই বাবা–ছেলেও রয়েছেন।
মৃত্যুর সংবাদ আসার পর স্বজনদের কান্নায় এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। স্থানীয় লোকজন বাড়িতে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন সহকারী সিনিয়র পুলিশ সুপার (সোনাগাজী-দাগনভূঞা সার্কেল) মাশকুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিখন বণিক, সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ হোসেন দাইয়্যান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এমএ হোসেন ও প্যানেল চেয়ারম্যান সাহাজান কবির সাজু।
স্বজনেরা জানান, আবুল হোসেন ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যান। এরপর আর বাড়িতে আসেননি। ১৯ ফেব্রুয়ারি বাবা জামাল উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সর্বশেষ কথা হয়। এ সময় আগামী এপ্রিলে দেশে আসার ইচ্ছার কথা জানান আবুল হোসেন। দীর্ঘ ১৩ বছর পর ছেলে ও নাতিকে প্রথমবার দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিলেন বাবা-মা। এখন ছেলের মরদেহটি অন্তত যাতে দেখতে পান সেই আকুতি জানাচ্ছেন তাঁরা।
দেশে এলে আবুল হোসেনকে বিয়ে করানোর জন্য মেয়ে দেখছিল পরিবার। নতুন করে করা বাড়িতে প্রবেশ করলেও আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল। আবুল হোসেনের জন্য সবাই অপেক্ষা করছিলেন।
আবুল হোসেনের বাবা জামাল উদ্দিন (৫৫) বলেন, ‘আমি আফ্রিকা থেকে দুই বছর আগে আসলাম। ঘরও করেছি। ছেলেকে বিয়ে করানোর কথা ছিল। এমন সংবাদ শুনে সবকিছু যেন মাটি হয়ে গেল! দুপুরে খাবার খেতে বসার পর একজন সহপাঠীর কাছ থেকে সংবাদ পাওয়ার পর আর খাবার পেটে ঢোকেনি। এখন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আকুল আবেদন যাতে আমার সন্তানের লাশটা দেশে ফেরত পাঠাতে সহযোগিতা করেন।’
জামাল উদ্দিনের তিন মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। একমাত্র ছেলেসন্তান ছিলেন আবুল হোসেন।