জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
নদীর ভেতর টানেল দিয়ে নাকি গাড়ি যাবে। আচ্ছা টানেলের মধ্যে গেলে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে না তো? কোনো রকম ফুটো হয়ে গেলে গাড়িসহ টানেল ভেসে যাবে না তো? পানির ভেতর বিদ্যুৎ গেল কীভাবে? এমন সব প্রশ্ন জাগছে আব্দুল করিমের মনে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সদ্য নির্মাণ করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের আনোয়ারা অংশের বহির্মুখের পাশে তাঁর বাড়ি। স্থানীয়রা তাঁকে করিম চাচা নামেই চেনেন।
আব্দুল করিমের বয়স এখন ৬৮। টানেল সম্পর্কে বিভিন্ন খবর রাখছেন তিনি। অপেক্ষা করছেন উদ্বোধনের পর টানেলটি দুই চোখভরে ঘুরে দেখবেন। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার টানেলটি পাড়ি দেবেন। মনের মধ্যে জাগা প্রশ্নের উত্তর খুঁজবেন। কারণ, এটি দেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে নির্মাণ করা প্রথম ও দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ সড়ক।
খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গ নির্মাণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণা প্রথমে আব্দুল করিম বিশ্বাস করেননি। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পানির তলদেশে সুড়ঙ্গ হবে, প্রথম যেদিন শুনেছি বিশ্বাস করিনি। গ্রামের মানুষ তো, তাই জানাশোনা কম। অনেকে বললেও, তাঁদের বলতাম এসব ফাঁকাবাজি বন্ধ কর। এখন নাকি সেই সুড়ঙ্গ হয়ে গেছে। দেখার আর তর সইছে না।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশিদ জানান, টানেলের ভেতর-বাইরে নিরাপত্তায় একই রকম ব্যবস্থা। টানেলে ঢোকার আগে অটোমেটিক গাড়ি স্কেনিং করবে অত্যাধুনিক ক্যামেরা। পুরো টানেলে ১০০টিরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা। যেগুলো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ব্যস্ত থাকবে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে, ৫ মিনিটেই উদ্ধারকাজ সম্পন্ন করতে দুই পাশে থাকবে বিশেষ টিম। টানেলের মধ্যে ইমার্জেন্সি বাইরের জন্য জায়গা রাখা হয়েছে।
হারুনুর রশিদ বলেন, ‘এই টানেল শুধু কর্ণফুলী নদীর দুই পারকে সংযুক্ত করেনি। ওয়ান সিটি টু টাউনের যে কনসেপ্ট সেটাও বাস্তবায়িত হয়েছে। এই টানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে। টানেল সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি থাকছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যরাও। টানেলে ১০০টির বেশি অত্যাধুনিক ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ যেমনি থাকবে তেমনি কোস্টগার্ড এই এলাকায় থাকবে এবং ট্যুরিস্ট পুলিশও আশপাশে থাকবে।’
চীনের রাষ্ট্রপতি সি চিন পিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চার বছর সাত মাসে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ হয়েছে এই নির্মাণযজ্ঞ। নদীর তলদেশে মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। পাশাপাশি সংযুক্ত করা হয়েছে দুটি টিউব। টানেলের বাইরে অ্যাপ্রোচ সড়ক থাকছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার।