ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে তানিম (২১) নামের এক যুবকের ছুরিকাঘাতে ফয়সাল আলম সেতু (১৭) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তার গলায় ১৮৪টি সেলাই লেগেছে। বর্তমানে হামলার শিকার ওই শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
গত রোববার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় সেতুর মা সীমা আক্তার বাদী হয়ে তানিমকে প্রধান আসামিসহ তিনজনের নাম উল্লেখ্য করে একটি হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করেন।
গত ৭ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের শ্রীরামপুর জামে মসজিদের মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
আহত সেতু জেলা শহরের হালদার পাড়া এলাকার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে। সে গ্যাস ফিল্ড স্কুল এন্ড কলেজের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও আগামী জুন মাসে মানবিক শাখার এসএসসি পরীক্ষার্থী।
মামলার সূত্রে জানা যায়, সেতু গত ৭ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) সকালে রামরাইল ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামে তার নানার বাড়িতে বেড়াতে যায়। রাতে শ্রীরামপুর জামে মসজিদের তারাবি নামাজে যাওয়ার পথে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে শ্রীরামপুর গ্রামের মহব্বত আলীর ছেলে তানিমের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। তারপর তানিম উত্তেজিত হন। এরপর তারাবি নামাজ শেষে বাড়িতে যাওয়ার সময় সেতুকে ধারালো রাম-দা, লোহার রড, ছুরি ও চাপাতিসহ লাঠিসোঁটা ও দলবল নিয়ে হামলা করে। একপর্যায়ে তানিম সেতুর গলার ডান পাশে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান।
পরবর্তীতে এলাকাবাসীরা সেতুকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেন। সেখান তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ঢাকায় পাঠান চিকিৎসকেরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজে সেতুর গলার অস্ত্রোপচার হয় এবং তার গলায় ১৮৪টি সেলাই লাগে। বর্তমানে সে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
এ বিষয়ে শ্রীরামপুর গ্রামের মলাই সরদার ও প্রতিবেশী ফরহাদ মিয়াসহ এলাকাবাসীরা বলেন, ‘তানিম এর আগেও এলাকার অনেক কিশোরকে একাধিকবার ছুরি ও কাটার ব্লেড দিয়ে আহত করেছে। সবাইকে বলে বেড়ায় তানিম প্রতিবন্ধী কিন্তু সে প্রতিবন্ধী নয়।
আহত সেতুর নানি মানজুআরা জানান, প্রতি বৃহস্পতিবার সেতু এখানে বেড়াতে আসে। রাত ১০টার দিকে পাশের বাড়ির ভাতিজার কাছ থেকে শুনি সেতুর গলা কেটে ফেলছেন। তাঁর নাতিকে প্রতিবেশী মহব্বত আলীর ছেলে তানিম মেরেছেন। এর আগেও এ রকম করে পাঁচ ছয়টা ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। তাঁর নাতিকে বিনা অপরাধে ছুরিকাঘাত করেছেন তানিম। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।
রামরাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মসিউর রহমান সেলিম বলেন, ‘সেতুর ওপর বিনা অপরাধে ছুরিকাঘাত করেছে তানিম। তাঁর সুষ্ঠু বিচার হোক। তানিম প্রতিবন্ধী না, তাঁর প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড নেই। তানিম এ রকম ঘটনা অনেক ঘটিয়েছে। এ রকম ঘটনা যেন আর না ঘটে সে জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিবে বিট পুলিশিং ও থানা-পুলিশ।’
এই ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, ‘এক স্কুলশিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে থানায় একটি মামলা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীকে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত তানিম প্রতিবন্ধী না, তার বিরুদ্ধে কেউ ভালো বলেনি। অতি শিগগিরই তানিমসহ মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করব।’