কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণ মামলার নথি জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ পাঁচজনের নামে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ এই আদেশ দেন।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সিরাজ উল্লাহ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বাকি তিন আসামি হলেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মাতারবাড়ীর বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ভূমি অধিগ্রহণের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেন। কিন্তু তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার মামলার ১ নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে নথিপত্র পাঠান দুদকের প্রধান কার্যালয়ে।
দুদকের আইনজীবীরা জানান, জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা জানতে পেরে কয়েক দিন পরে একই আদালতে বাদী কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, জেলা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন গত বছরের ১ জুলাই আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্তে নথি জালিয়াতির ঘটনায় সহযোগিতা করায় সাবেক জেলা প্রশাসক ও জেলা জজ ছাড়াও আসামি করা হয়েছে বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. জাফর আহমদকে।
মামলায় দুদকের কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রহিম ও কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম শাহ হাবিবুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
দুদকের নিযুক্ত সরকারি কৌঁসুলি সিরাজ উল্লাহ জানান, ২১ জানুয়ারি আদালতে জালিয়াতির বিষয়ে দুদকের দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হয়। ২৩ জানুয়ারি আদালত ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অভিযুক্ত পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। বর্তমানে তাঁরা সবাই পলাতক।
দুদক ও আদালত সূত্র জানায়, মাদারবাড়ীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপভিত্তিক কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪১৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এতে চিংড়ি, ঘরবাড়িসহ অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। চিংড়ি ক্ষতিপূরণের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেনামে ২৫টি চিংড়িঘের দেখিয়ে ক্ষতিপূরণের ৪৬ কোটি টাকা থেকে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।