নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
এইচএসসি পরীক্ষায় ছেলের ফলাফল জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পর চট্টগ্রামের সাবেক সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে মামলা করেছে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। একই মামলায় আসামি করা হয়েছে সচিবের ছেলে, শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানসহ আরও তিনজনকে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. সামছু উদ্দিন আজাদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন–অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র নাথ (৫৬) ও তাঁর ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ (২০), শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খান (৬১) এবং সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার (৬১)।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০,৪৬৫, ৪৬৬,৪৬৭, ৪৬৮,৪৭১ ও ৩৪ ধারা এবং পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এর ৫,৬, ১২ ও ১৩ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছিল ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ফলাফল প্রকাশের আগে যে কোনো সময় আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতি ও প্রতারণাপূর্বক নক্ষত্র দেবনাথের ফলাফল পরিবর্তন করেন। নক্ষত্র ছাড়া বাকি তিনজন জালিয়াতি সংঘটনের সময় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে স্ব স্ব পদে দায়িত্বরত ছিলেন।’ মামলাটি তদন্তধীন রয়েছে বলে জানান ওসি।
জানা যায়, নারায়ণ চন্দ্র নাথ ২০২২ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন। সেবছর তার ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
ফলাফল ঘোষণার পর অভিযোগ ওঠে, নারায়ণ চন্দ্র নাথ তাঁর ছেলেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জিপিএ ফাইভ পাইয়ে দিয়েছেন।
কে বা কারা নক্ষত্রের ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করলে তার মা বনশ্রী দেবনাথ নগরীর পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর ফলে বিতর্ক আরও জোরালো হয়। এ অবস্থায় গত বছর জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
মাউশি’র শৃঙ্খলা বিভাগের সিনিয়র সহকারি সচিব শতরূপা তালুকদারের স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, তদন্তে নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণ পাওয়া গেছে। এজন্য নারায়ণের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী মামলাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া ও নক্ষত্রের ফলাফল বাতিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর ভিত্তিতে জালিয়াতির দায়ে মাউশি’র চট্টগ্রামের পরিচালক পদ থেকে নারায়ণকে ওএসডি করা হয়। তার ছেলের ফলাফল বাতিল করা হয়।