আজও মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলার ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। দিন-রাতে দুবার এসব এলাকার মানুষ পানিতে ভাসতে থাকে। এইভাবে গত পাঁচ দিন ধরে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে নদীতীরের বাসিন্দারা।
এ ছাড়া মজুচৌধুরীরহাট ফেরিঘাটের প্লাটুন ডুবে গিয়ে লক্ষ্মীপুর-ভোলা নৌ-রুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঘাটের আশপাশেও উঠেছে পানি। ফলে দুই পাড়ে আটকে থাকতে হচ্ছে কয়েক শ পণ্যবাহী পরিবহন। পাশাপাশি উপকূলীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকেছে পানি। এতে করে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
অন্যদিকে জোয়ারের তীব্র স্রোতের কারণে রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় নতুন করে সাহেবেরহাট, লূধুয়া, নাছিরগঞ্জ, চরফলকন, মতিরহাট, বাংলাবাজার, আসলপাড়া, জনতাবাজার ও চর আলেকজান্ডারসহ ১৫টি পয়েন্টে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় চার শতাধিক পরিবার ভাঙনের মুখে পড়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে প্রতিনিয়ত ভাঙছে। ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজও ঠিকমতো হচ্ছে না। সেখানে রয়েছে নানা অনিয়ম। তাই তীর রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন না হলে হারিয়ে যাবে দেশের মানচিত্র থেকে এই দুই উপজেলা। তাই দ্রুত বাঁধের কাজ বাস্তবায়নের দাবি জানান স্থানীয়রা।
মজুচৌধুরীরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক কাজী জাহিদুল হক বলেন, শনিবার বিকেলে সবচেয়ে বেশি পানি উঠেছে। ফেরির টন্টুন ও আশপাশের এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে ঘাটে আটকা পড়েছে দেড় শতাধিক যানবাহন।
চরকালকিনি ইউপি চেয়ারম্যান সাইফ উল্যাহ জানান, গত পাঁচ দিন ধরে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ফলে রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পুকুর ও ঘেরের মাছ পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এইভাবে দিনে দুবার পানির মধ্যে বন্দী থাকতে হচ্ছে। তবে ভাটায় পানি নামলেও দুর্ভোগ কমেনি।
গত পাঁচ দিন ধরে মেঘনা নদীর পানি চার-পাঁচ ফুট বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা মো. ফারুক আহমেদ। তিনি জানান, পূর্ণিমার কারণে নদীতে পানি বাড়ছে। এটি আরও কয়েক দিন থাকবে। অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির তেিড়ে ভাঙন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বাঁধের কাজ চলছে। এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এ ছাড়া বাঁধের কাজে কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’