কুমিল্লা প্রতিনিধি
পরিবারের সুখের আসায় মাত্র ছয় মাস আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কাজ করতেন একটি হোটেলে। ১২ দিনের ছুটি পেয়ে অন্যদের সঙ্গে ওমরাহ করতে যান কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মোস্তাপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২৪)। কিন্তু পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনিসহ ২৪ জন নিহত হন।
নিহত ২২ জনের মধ্যে ১৩ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে কুমিল্লার রয়েছেন তিনজন। মামুন মিয়া ছাড়া কুমিল্লায় নিহত অন্য দুজন হলেন মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের রাসেল মোল্লা (২৮) এবং দেবীদ্বার উপজেলার রাজামেহের গ্রামের গিয়াস হামিদ (৩২)। গত সোমবার সৌদি আরবের আসির প্রদেশ ও আবহা শহরের সংযোগ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে মৃত্যুর খবর পেয়ে কুমিল্লার মুরাদনগরে মামুন মিয়ার গ্রামের বাড়িতে চলছে মাতম। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। কেউ কেউ তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আজ বুধবার সকালে মামুন মিয়ার বাড়িতে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে।
মামুন মিয়ার মা মমতাজ বেগম বলেন, ‘ধারদেনা করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি কিছুদিন হলো। এখনো দেনা শোধ করতে পারিনি। এই সময়ে ছেলে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। ছেলের মরদেহ দেশে আনার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।’
মামুনের বাবা আবদুল আওয়াল বলেন, ‘১২ দিনের ছুটি পেয়ে ওমরাহ করতে যাচ্ছে। ফোনে দোয়া চেয়েছে, এটাই ছিল ছেলের সঙ্গে আমার শেষ কথা।’
নিহত গিয়াস হামিদের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘এবার রমজান মাসে দেশে এসে ঈদ করার কথা ছিল। দুই মেয়ে ও এক ছেলের জন্য কেনাকাটাও করেছেন। তিনি তো দেশে আসছেন ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে।’
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দীন ভূঞা জনী বলেন, লাশ দেশে আনতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নিহতদের পরিবারগুলোকে সহায়তা করা হবে।
মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসানুল আলম সরকার কিশোর বলেন, ‘নিহতদের পরিবারগুলো খুবই অসহায়। ধারদেনা করে প্রবাসে গিয়েছিল। এ দুর্ঘটনায় পরিবারগুলো আরও নিঃস্ব হয়ে গেল। সাধ্যমতো অসহায় পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াব। প্রশাসনের সহযোগিতায় লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’