ফেনীতে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। ডায়রিয়া, চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, জ্বর–আমাশয়সহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আশংকাজনক হারে। হাসপাতালগুলোতে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুনের বেশি রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক–নার্সরা।
জেলায় বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। চিকিৎসার আশায় সদর জেনারেল হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা। হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী শয্যার অভাবে বারান্দায় ও রাস্তায় সেবা নিতে হচ্ছে।
সদর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে ১৭ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭০ জন। এখানে শূন্য থেকে ৩০ বছরের রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। অপর একটি ভবনে তদূর্ধ্ব রোগীরা সেবা নিচ্ছেন সেখানেও ২১ শয্যার বিপরীতে রোগীর সংখ্যা ৭০ জন। ওয়ার্ডে রোগীর জায়গার সংকুলান না হওয়ায় শিশু রোগীদের ওয়ার্ডের বাইরের রাস্তায় ও বাগানে বিছানা পেতে খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন অভিভাবকরা। একই চিত্র শিশু ওয়ার্ডেও। শিশু ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার বিপরীতে রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩৬ জন।
হাসপাতালের চিকিৎসক–নার্সরা জানান, প্রতিদিন পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্ত: বিভাগ ও বহির্বিভাগে রেকর্ড পরিমাণ রোগী ভিড় করছে। এতে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও মেডিকেল সহকারীরা।
এক শিশু রোগীর বাবা মো. রাসেল বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতরে চিকিৎসা তো দূরে থাক, দাঁড়ানোর পরিস্থিতিও নাই। এত রোগী আমি আগে কখনো দেখিনি। বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের সামনের বাগানে মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছি। এভাবে চিকিৎসা সেবা হয় না। এ সংকট সমাধানে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টদের এখনই উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’
সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘বন্যা পরবর্তী ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ বেশি। হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ রোগীর চিকিৎসা স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক–নার্স দিয়ে কোনোভাবেই সম্ভব না। এরপরও কর্তৃপক্ষ প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ সংকট নিরসনে কর্তৃপক্ষ যদি আইসিডিডিআরবির সহযোগিতা নিতে পারে এবং এখানে একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা যায় তাহলে রোগীরা আরও বেশি চিকিৎসা সেবা পাবে।’
শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ শ্যামলী রানী বলেন, ‘শিশু ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার বিপরীতে রোগী আছে ১৩৬ জন। যে পরিমাণ সে অনুসারে নার্স নেই। বিপুলসংখ্যক রেগীর চাপ সামলাতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।’
সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান সাম্মী বলেন, ‘বন্যা পরবর্তী সময়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যাকালীন দূষিত পানি ও রোগবাহী আবহাওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে আমরা ২১ শয্যার আলাদা ডায়রিয়া ওয়ার্ড চালু করেছি।’
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকতাদের বিষয়টি অবহিত করেছি, তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি এনজিও আমাদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। আমরা তাদের বলেছি দুর্যোগ পরবর্তী এসময়টায় যদি ফিল্ড হাসপাতাল (তাঁবুর তৈরী অস্থায়ী হাসপাতাল) করা গেলে রোগীরদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে পারবো।