শরীরের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রোপচার করেন তাঁরা। হার্ট খুলে আবার জোড়াও লাগান। সেই চিকিৎসকদের চোখে এখন পানি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পেট, পিঠ ও চোখে গুলি নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিদের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকদের চোখে পানি দেখা গেছে। পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে, এমন আশঙ্কায় অনেকেই অঝোরে কাঁদছেন।
চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিক্ষক মো. ওসমান। তিনি নামাজ শেষে বাসায় যাওয়ার পথে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান। একপর্যায়ে একটি পরিত্যক্ত দোকানে আশ্রয় নিলে, সেখানে গুলি করা হয়। তাঁর পেছনের ঘাড়ে গুলি লেগেছে। সেখানে এক ইঞ্চি গর্ত হয়ে গেছে। পেটেও ছররা গুলি লেগেছে তাঁর।
ওসমান ষোলশহর এলাকায় দারুত তারবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় ষোলশহর-মুরাদপুর মাঝামাঝি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। ওই দিন পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।
ওসমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাগরিবের নামাজের পর বাসায় যাওয়ার পথে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যাই। একপর্যায়ে একটি পরিত্যক্ত দোকানে আশ্রয় নিই। এ সময় ৮ মিটার দূর থেকে পেছন দিক দিয়ে গুলি করা হয়। গুলি পিঠে ও ঘাড়ে লাগে।’
বহদ্দারহাট এলাকার আম বিক্রেতা মো. আবুল বাসার। আম যেদিন বিক্রি হয়, ওই দিনের টাকায় সংসার চলে তাঁর। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে তাঁর পায়ের হাড়ও গুলিতে গুঁড়ো হয়ে গেছে। তিনি হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
একই ওয়ার্ডে গুলিতে ডান পায়ের দুটো হাড় ভেঙে গেছে নগরের ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইয়াসের। চিকিৎসক আসলে তাঁর কাছ থেকে ইয়াসির জানতে চান হাঁটতে পারবেন কি না। তখন চিকিৎসক ঝিম ধরে, অনেকক্ষণ পর বললেন, ‘‘হ্যাঁ তুমি হাঁটতে পারবে।’’ এ সময় চিকিৎসককে চোখ মুছতে দেখা গেছে।
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ ও ১৮ জুলাই চট্টগ্রামে দুই দিনের সংঘর্ষে প্রায় আড়াই শ আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ছিলেন অন্তত ৪০ জন। ১৮ জুলাই এক দিনেই চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৭৬ জনকে। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভর্তি করা হয় ৩০ জনকে। আহতদের মধ্যে ৮ জন পুলিশ, ১০ পথচারী ছাড়া বাকিরা ছিলেন শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন পথচারী, বাকিরা ছাত্র। নিহত চারজন ছিলেন গুলিবিদ্ধ।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘দুই দিনে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনো ১৬ জনের মতো আছে। তাঁদের বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।