ঈদ ও বাংলা নববর্ষের টানা পাঁচ দিনের ছুটিতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত ও বিনোদনকেন্দ্রে ঠাসা পর্যটক। কোথাও তিলধারণের ঠাঁই নেই। আগামী সোমবার পর্যন্ত পর্যটকে ভরপুর থাকবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
পবিত্র রমজান, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জাতীয় নির্বাচনের কারণে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র অনেকটা পর্যটকশূন্য ছিল। পর্যটকের সেই খরা কাটিয়ে এবারের ঈদ ও বাংলা নববর্ষের ছুটিতে পর্যটকেরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। এতে পর্যটকনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যে চাঙাভাব দেখা দিয়েছে।
এর আগে রমজান মাসে পর্যটকদের বরণে হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস, রিসোর্ট ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো নতুন করে সাজসজ্জা ও সংস্কার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সোমবার পর্যন্ত হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউসের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং রয়েছে। কয়েক দিন ধরে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা। এর মধ্যে দুটি বড় উৎসবে টানা ছুটি চলছে। ফলে এ ছুটি কাটাতে মানুষ বরাবরই ছুটে এসেছেন কক্সবাজারে।
আজ শনিবার বিকেলে শহরের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী সমুদ্রসৈকত ঘুরে দেখা গেছে, পুরো সৈকতে কোথাও ঠাঁই নেই। সৈকত যেন জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে। পর্যটকেরা লোনাজলে গা ভেজাতে মেতে উঠেছে। কেউ ওয়াটার বাইক (জেটস্কি), কেউ বিচ বাইক ও কেউ ঘোড়ায় চড়ে সাগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রিয়জনদের এসব আনন্দ-উচ্ছ্বাসের চিত্রধারণ করে রাখছেন।
লাবণী থেকে কলাতলীর এই দুই কিলোমিটার সৈকতে আজ শনিবার এক লাখের বেশি পর্যটক সমুদ্রস্নানে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের বিচকর্মী বেলাল হোসেন।
কুমিল্লার দেবিদ্বার থেকে সপরিবারে বেড়াতে এসেছেন সরকারি চাকরিজীবী নওশেদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ঈদ ও বাংলা নববর্ষের ছুটি কাটাতে বরাবরই কক্সবাজার ছুটে এসেছি। এখানে পাহাড়-সমুদ্র একসঙ্গে দেখার অপূর্ব সুযোগ রয়েছে।’
মাগুরার শালিখা থেকে এসেছেন আজিজুল ইসলামের পরিবার। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে বান্দরবানের থানছি-আলীকদম যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেখানে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এখানকার পাহাড়-পর্বত ঘুরে ফিরে যাব।’
কক্সবাজার শহরের পাশাপাশি পর্যটকেরা মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর, হিমছড়ির ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী ও পাটোয়ারটেক, টেকনাফ সৈকত, মাথিনকূপ, রামুর বৌদ্ধবিহার, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, সুরাজপুরের নিভৃতে নিসর্গ, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, সোনাদিয়া ও মাতারবাড়ী ছুটছেন পর্যটকেরা।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে অনেকটা পর্যটকশূন্য ছিল কক্সবাজার। তবে ঈদ ও পয়লা বৈশাখের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক এসেছে। হোটেল-মোটেলের কক্ষ ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ বুকিং রয়েছে। আগামী সোম-মঙ্গলবার পর্যন্ত পর্যটক ভরপুর থাকবে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং সেবা প্রদানে সমুদ্রসৈকত ছাড়াও অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের সার্বক্ষণিক টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যটকদের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। পর্যটকেরা যেকোনো সমস্যায় একটি বাটন চাপ দিয়েই আমাদের সেবা নিতে পারবেন।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘ঈদ ও বিশেষ ছুটিতে পর্যটকে মুখর থাকে কক্সবাজার। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পর্যটকের সেবা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীরা কাজ করছে। পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সমুদ্রসৈকত এবং আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রগুলোয় দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে।’