চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ডাকাতির সময় ডাকাত দলকে চিনে ফেলায় জাহাঙ্গীর আলম নামে এক পথচারীকে হত্যা করেন তারা। এ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে প্রায় ২০ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আজ বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৭ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান। এর আগে মঙ্গলবার রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানার ফিরিঙ্গিবাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত সাজাপ্রাপ্ত আসামির নাম—দিদারুল আলম ওরফে দিদার ডাকাত (৪৫)। তিনি হাটহাজারী উপজেলার ফটিকালতি এলাকার মৃত সৈয়দ আহাম্মদের ছেলে।
র্যাব বলছে, ২০০৩ সালের ২৫ নভেম্বর ডাকাত দলের সদস্যরা হাটহাজারী পৌরসভার মিরেরহাট-মোহাম্মদপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে ডাকাতি করছিলেন। ওই সময় পথচারীদের যার কাছ থেকে যা পাচ্ছিলেন সব হাতিয়ে নিচ্ছিলেন ডাকাতেরা। ঘটনার দিন রাতে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলম নামে এক পথচারী। সে সময় তাঁর কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার একপর্যায়ে তিনি ডাকাত দলের সদস্যদের চিনে ফেলেন এবং চিৎকার শুরু করেন। বিষয়টি টের পেলে ডাকাত দল জাহাঙ্গীর আলমের ঊরুতে দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো ছুরি দিয়ে জখম করে।
এ সময় স্থানীয়রা জাহাঙ্গীরের চিৎকার শুনে এগিয়ে এলে ডাকাতদল পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গিয়ে জাহাঙ্গীরকে মুমূর্ষু অবস্থায় এবং মো. ফজল ড্রাইভারসহ আর ৭ থেকে ৮ জনকে হাত-পা বাঁধা ও আহত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে স্থানীয়রা জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যু হয়। নিহত জাহাঙ্গীরের প্রতিবেশী আরেক ভুক্তভোগী মো. ফজল আহাম্মদ ড্রাইভার ডাকাতির ঘটনায় বাদী হয়ে ২০০৩ সালের ২৯ নভেম্বর হাটহাজারী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, আলোচিত এ মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের ৩০ মে আসামি দিদারকে হত্যাকাণ্ডের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত। অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ ডাকাতির দায়ে তাঁকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ডাকাত দিদারের বিরুদ্ধে হাটহাজারী মডেল থানায় ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি ও মাদক সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে বলে র্যাব জানায়।
এ বিষয়ে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. নুরুল আবছার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলার পর আসামি দিদার একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে জামিনে বের হয় তিনি পলাতক হয়ে যান। রায় ঘোষণার সময় তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। তবে তাঁকে গ্রেপ্তারে নজরদারি অব্যাহত রাখে র্যাব। পরে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাঁকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’