হাতিয়া (নোয়াখালী): লকডাউন, শাটডাউন, স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান এই শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত নন ভাসানচরের রোহিঙ্গারা। সেখানে নেই কোন করোনার উপস্থিতি। সাগরের মধ্যে অবস্থিত এই দ্বীপে মাঝে মধ্যে কারও আগমন ঘটলে তাঁকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে দিতে হয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা। বর্তমানে নোয়াখালী জেলায় হাতিয়ার এই দ্বীপে অবস্থান করছেন ১৮ হাজার ৩৪৭ জন রোহিঙ্গা। আবার রোহিঙ্গাদের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেখানে অবস্থান করছে নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশের প্রায় ৩ শতাধিক সদস্য। এদের কারও শরীরে নেই করোনার উপস্থিতি। নেই কোন উপসর্গও।
রোহিঙ্গাদের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সরকার ভাসানচরে স্থাপন করেছেন ২০ শয্যার দুটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারসহ সকল সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। বিশেষ করে করোনার এই মহামারিতে নমুনা পরীক্ষার জন্য জিন এক্সপার্ট মেশিন স্থাপন করে তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিক একটি ল্যাব। এই ল্যাবে প্রতিদিন চারজন রোগীর করোনা পরীক্ষা করে ফলাফল দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।
ভাসানচর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে আসার আগে আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আসতে হয়। আমি এসেছি ৫ জুন। তার আগে আমাকে পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে হয়েছে। করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর আমি ভাসানচরে আসার অনুমতি পেয়েছি। আমাদের সকল সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রে নিয়ম একই। এখন পর্যন্ত ভাসানচরে করোনা নেই। তাই এখানে লকডাউন বা শাটডাউনের প্রয়োজনীয়তা নেই। এ ছাড়াও ভাসানচরে অবস্থান করা সরকারি কর্মকর্তাদের করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। এই দ্বীপে অবস্থান করা সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারি কাজে জড়িত সাধারণ লোকদের মধ্যে ৩০০ জনকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ২৮৫ জনকে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গাদের টিকা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, ভাসানচরে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এরই মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়। যাতে ১ লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এর আগে আসেন আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। তাঁদের জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরকে আবাসনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। তাঁদের জন্য আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে এই দ্বীপে। আছে হাসপাতাল, মসজিদ, খেলারমাঠ, শিশুপার্ক, ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম ধাপে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গার আগমন দিয়ে শুরু হয় ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিক স্থানান্তর কার্যক্রম। এর পরে আরও ৬টি ধাপে আসা নারী, পুরুষ ও শিশুসহ মোট ১৮ হাজার ৩৪৭ জন রোহিঙ্গা বর্তমানে ভাসানচরে অবস্থান করছে। প্রতিটি ধাপে আসা রোহিঙ্গাদের ভাসানচর ঘাটেই প্রবেশ পথে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীরা।