কক্সবাজার শহরের পুরাতন বিমানবন্দর সড়কে থাকা ভাঙারি দোকান উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের আদেশ দুই বছরেও কার্যকর হয়নি। এ দিকে এসব দোকান ও প্লাস্টিকবর্জ্য গুঁড়ো করার কারখানার শব্দ ও বায়ুদূষণে শিক্ষার্থী, পর্যটক ও স্থানীয় নাগরিকেরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ভাঙারি দোকানের কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও শব্দদূষণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। শিক্ষার্থী, পর্যটক ও পথচারীদের নাক-মুখ চেপে চলাচল করতে হয়। এ ছাড়া ভাঙারির দোকানগুলো ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন অপরাধ চক্র। এসব চক্রের সদস্যরা চুরি ও ছিনতাই হওয়া পণ্য এনে এখানে বিক্রি করছে।
অভিযোগ রয়েছে, ভাঙারিভর্তি গাড়ি করে চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচার করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছে ইয়াবার চালান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝাউতলা আবহাওয়া অফিসের সামনে থেকে বেশ প্রশস্ত পুরাতন বিমানবন্দর সড়কটি উত্তর-পূর্বদিক হয়ে নতুন সড়কে মিশেছে। এ সড়কে ৩০-৩২টি বড় ভাঙারির দোকান ও চারটি প্লাস্টিকপণ্য গুঁড়োর করার কারখানা রয়েছে। এসব ভাঙারি দোকানের পণ্যের কারণে সড়কের বড় অংশ দখল হয়ে আছে।
ঝাউতলার বাসিন্দা আবদুল করিম বলেন, ‘ভাঙারি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রভাবশালী ও প্রশাসনের লোকজনকে হাত করে কয়েক বছর ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কোনো প্রতিবাদ করলে তাঁকে হেনস্তা করা হয়।’
কক্সবাজারের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করে কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম। স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিনের বাড়ি ওই এলাকায়। তিনি সম্প্রতি কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের পরিচালক বরাবর একটি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘ভাঙারি দোকান উচ্ছেদ ও দূষণের বিষয়ে কথা বলার কারণে আমার বাড়ির সামনে ও রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়েছে।’
জানতে চাইলে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, ‘এ-বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়কটির অদূরেই কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ, সৈকত বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কক্সবাজার কেজি স্কুল, কক্সবজার মডেল হাইস্কুল, মোজাম্মেল হক মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয় ও হাজি ছিদ্দিকিয়া প্রি-ক্যাডেট হাইস্কুলের অবস্থান। এতে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ভাঙারি দোকান ও কারখানা উচ্ছেদের দাবি জানানো হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার কেজি স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুল হক ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর ভাঙারি দোকান উচ্ছেদ চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। এই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে একই বছরের ১৪ নভেম্বর বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে ভাঙারি দোকান উচ্ছেদের আদেশ দেন।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, উচ্চ আদালত থেকে ভাঙারিপট্টি উচ্ছেদের জন্য দেওয়া আদেশ দুই বছরেও কার্যকর হয়নি। এরই মধ্যে দুজন জেলা প্রশাসক বদলি হয়েছেন। বর্তমান জেলা প্রশাসককেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
রিট আবেদনকারী শাহীনুল হকের আইনজীবী ছিদ্দিকুর রহমান জানান, আদালতের আদেশ অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে ডিমান্ড নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’