চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার সরকারি ওষুধ পাচারকালে হাসপাতালের এক কর্মচারীসহ দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। এই চক্রটি চমেকের রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্রি করত। বিশেষ করে চমেকের সামনের ফার্মেসিগুলো এসব ওষুধ কিনত।
এছাড়াও চক্রটির বড় একটি বাজার কোতোয়ালি থানার হাজারী গলি। অভিযোগ আছে, চক্রটির নেপথ্যে আছে নুরু সিন্ডিকেট।
আজ সোমবার দুপুরে হাসপাতালের গোল চত্বর থেকে বিপুল পরিমাণ ওষুধসহ ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মচারী আশু চক্রবর্তী ও আউটসোর্সিং কর্মচারী মো. সৈয়দকে আটক করা হয়। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের সরকারি ওষুধ পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, সৈয়দ আহমেদ কালো ব্যাগে করে ওয়ার্ড থেকে হাসপাতালের মেইন গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় সন্দেহ হলে আনসার সদস্যরা আটক করে। এ সময় পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আশু চক্রবর্তী। তিনি দৌড়ে পালানোর সময় দায়িত্বরত পুলিশ তাকেও আটক করে। পরে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে ওষুধ পাচারের কথা স্বীকার করেন বলে জানান চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক। তিনি বলেন, অভিযান চলমান আছে।
সূত্র জানায়, চমেক ঘিরে একটি শক্তিশালী দালাল চক্র আছে। প্রায় ৩০ ফার্মেসি নিয়ে একটি অ্যাসোসিয়েশনও আছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করেন মোহাম্মদ নুরু। জানা গেছে, তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার লাকসামে। নুরুর ভাই মোহাম্মদ বাহার চমেকের ব্লাড ব্যাংকে এবং আরেক ভাই মাসুদ ওয়ার্ড বয় হিসেবে কাজ করছেন।
তবে নুরু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যারা আপনাকে তথ্য দিয়েছেন, তারাই এসবের সঙ্গে জড়িত।
দালাল চক্রের একজন সদস্য আজকের পত্রিকাকে জানান, চমেকের প্রায় প্রত্যেকটা ওয়ার্ডের কর্মচারীরা ওষুধ পাচারের সঙ্গে জড়িত। চমেকে কোনো রোগী ভর্তি হলে তাঁকে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ওষুধ লিখে দেন। সেই অতিরিক্ত ওষুধগুলো সংগ্রহ করে কর্মচারীরা। এছাড়া সাদা স্লিপে ওষুধ লিখে, সেই ওষুধ চমেকের ফার্মেসি থেকে নিয়ে আসেন কর্মচারীরা।
এছাড়াও গাইনী ওয়ার্ডে ওষুধ বাণিজ্যটা বেশি হয়। সিজারিয়ান রোগীদের বেঁচে যাওয়া ওষুধগুলো সংগ্রহ করে সময় বুঝে বাইরে বিক্রি করে দেয় চক্রটি। কয়েক দিন পরপর লাখ টাকার বেশি ওষুধ বাইরে বিক্রি করে চক্রটি।
চমেকের সামনের এক ফার্মেসির মালিক জানান, প্রোসাই ক্লিডিন হাইড্রোক্লোরাইড ইনজেকশন, সেফরাডিন ক্যাপসুল, ওমিপ্রাজল ক্যাপসুল, হিপনোফাস্ট, ইনজেকশন, নোবেসিট, ইটোরেক, কনসুকন ও ডিজমার মতো দামি ওষুধ চমেকের কর্মচারীরাই বিক্রি করে থাকেন। লাভের আশায় ফার্মেসিগুলোও নিয়ে থাকেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আজকে আটক হওয়া এই দুজনের সঙ্গে আরও কারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। যেই হোক প্রমাণ পেলে, তাঁকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘যে একজন সরকারি কর্মচারী গ্রেপ্তার হয়েছেন, তার বিরুদ্ধে সরকারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। যাদের নাম আসবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলেছি।’