স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষা আর মাত্র ছয় দিন বাকি। সেতুতে মাথা লাগবে তিন বছর আগে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে। ওই সময় ছেলেধরা সন্দেহে ঢাকায় গণপিটুনিতে প্রাণ হারান তাসলিমা বেগম রেণু। তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। সর্বকনিষ্ঠ মেয়ের করুণ মৃত্যুতে আজও কাঁদছেন বৃদ্ধা ছবুরা খাতুন (৭৫)। মাকে খুঁজে ফিরছে দুই শিশুসন্তান তাহসিন আল মাহির (১৩) ও তাসমিম মাহিরা তুবা (৭)।
মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই তুবা বড় খালার সঙ্গে থাকছে। খালাকেই মা বলে ডাকে। এখন পড়ালেখা করছে প্রথম শ্রেণিতে। আর মাহিরকে ভর্তি করা হয়েছে মাইলস্টোন স্কুলে। সেখানে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছে সে। তাসলিমা আক্তার রেনু ইডেন কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছিলেন। ব্র্যাক এবং পরে আড়ংয়ে চাকরি করতেন। ছেলে মাহিরের বয়স যখন দেড় বছর, তখন চাকরি ছেড়ে দেন। তুবার জন্মের পর স্বামীর সঙ্গে রেণুর ছাড়াছাড়ি হয়। একলা মা দুই সন্তানকে সামলাতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালে ছেলেধরার গুজবে সারা দেশে ২১টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারান পাঁচজন। ওই বছরের ২০ জুলাই রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়ে তুবাকে ভর্তির বিষয়ে তথ্য জানতে যান তাছলিমা আক্তার রেণু। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নারী তাঁকে ছেলেধরা সন্দেহ করলে তাৎক্ষণিক ওই এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই বিভিন্ন বয়সী কয়েক শ নারী-পুরুষ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। উন্মত্ত জনতার হাত থেকে রক্ষা করতে রেণুকে দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। লোকজন সেখানকার লোহার গেট ভেঙে রেণুকে টেনে-হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে এনে এলোপাতাড়ি লাথি, কিল, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।
রেণুর বৃদ্ধা মা ছবুরা খাতুন বলেন, ‘আমি মৃত্যুপথযাত্রী। আমার পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ রেণু ছিল আমার অতি আদরের। আমার নাড়িছেঁড়া ধনকে হারিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে জেনে খুব খুশি হয়েছি। তবে আমার মেয়ের বিচার দেখে যেতে পারব কি না—এ নিয়ে হতাশ। জীবদ্দশায় আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখে যেতে চাই।’
স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের শুরুর দিকে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের জন্য মানুষের মাথা লাগবে বলে যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। এ নিয়ে সারা দেশে বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। গণপিটুনিতে প্রাণ হারান অন্তত পাঁচজন। অবশেষে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষকে এই গুজবের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন: