হিমেল চাকমা, রাঙামাটি
জুলাইয়ে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানি ভরপুর থাকে। তবে এ বছর পানি কম। হ্রদের অনেক অংশের পানি শুকিয়ে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠের মতো দেখাচ্ছে।
এতে জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছে জেলার বরকল, জুরাছড়ি, লংগদু, বিলাইছড়ি ও বাঘাইছড়ি উপজেলার লাখো মানুষ। কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশাল এ হ্রদে পানি আছে শুধু লংগদু উপজেলার কাট্টলী বিল, রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার বিল, কাপ্তাই বাঁধের সম্মুখ অংশ ও নিচু এলাকার বিলগুলোতে। এ ছাড়া নদীগুলোতে রয়েছে সামান্য পানি। তবে সেখানে বড় নৌযান চলতে পারে না। এদিকে জেলার নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল উপজেলার কাপ্তাই হ্রদের অংশে পানি শুকিয়ে সবুজ মাঠ হয়ে গেছে। সেখানে এখন গরু-ছাগল চরানো হচ্ছে।
জুরাছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের নৌপথে রাঙামাটি সদরে যেতে হয়। এটিই একমাত্র পথ। হ্রদে পানি কম থাকায় বড় কোনো নৌযান সেখানে যাতায়াত করতে পারছে না। ফলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ফসল–মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।’
বরকল উপজেলার চেয়ারম্যান বিধান চাকমা বলেন, বরকলের সঙ্গে জেলার নৌপথের দূরত্ব বেড়েছে। হ্রদে পানি কম থাকায় যাতায়াতের সময় বাড়ছে। পণ্য পরিবহনে ব্যয় বেড়েছে। তিনি বলেন, আগে বাড়ির সঙ্গে বোট ভিড়ানো যেত। এখন ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার কাঁধে করে মালামাল বহন করতে হচ্ছে।
রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় গত চার মাসের বেশি সময় সেখানে বড় কোনো লঞ্চ চলাচল করতে পারছে না। ছোট ছোট বোট দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের রাঙামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কাপ্তাই হ্রদ রাঙামাটির প্রাণ। মানুষের জীবন–জীবিকাসহ অনেক কিছু নির্ভর করে এর ওপর। হ্রদটি শুকিয়ে পানি কমে যাওয়ায় সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
তৌহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের সুবিধার্থে ১ মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাছ শিকার বন্ধ থাকে। হ্রদে পানি কম থাকায় জেলেদের হাতে সব পোনা ধরা পড়বে। এ কারণে আমরা এ বছর বিকল্প চিন্তা করছি। প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞার সময় আরও বাড়ানো হবে।’
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী বাশার বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদে পানি না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। সেখানকার পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে মাত্র দুটি চালু রয়েছে। ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। হ্রদে পানি না বাড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে না। আমাদের প্রকৃতির ওপরই নির্ভর করতে হবে। নিজেদের কিছু করার নেই।’
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালের রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র করা হলে সৃষ্টি হয় কাপ্তাই হ্রদ। জলমগ্ন হয় ৭২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা।