হোম > সারা দেশ > কক্সবাজার

আসামিরা বাইরে, ধর্ষণের অভিযোগ করা নারী স্বামী-সন্তানসহ ‘বন্দী’

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কক্সবাজার প্রতিনিধি

‘আশিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আমাকে দুই দফায় জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। আমি আশিকুল, মো. বাবু ও ইসরাফিল হুদা জয় প্রকাশ জয়ার ফাঁসি চাই।’ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে স্বামী সন্তানকে জিম্মি করে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার নারী পর্যটক আদালতের কাছে ২২ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এভাবেই নিজের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরে আসামিদের শাস্তি চেয়েছেন। 

কিন্তু ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো ভুক্তভোগী ওই নারী পর্যটক, মামলার বাদী তাঁর স্বামী ও শিশু সন্তানকে এক প্রকার আটকেই রেখেছে টুরিস্ট পুলিশ। 

গত শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩ আদালতে জবানবন্দি দেন ভুক্তভোগী পর্যটক। ১৭ পৃষ্ঠার সেই জবানবন্দিতে তিনি সেদিনের পুরো ঘটনা তুলে ধরেন। সেখানে বলা হয়, গত বুধবার রাতে স্বামী ও সন্তানকে জিম্মি করে তুলে নিয়ে দুই দফায় দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয় ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া ওই নারী পর্যটককে। 

জবানবন্দিতে ওই নারী জানান, ডিসেম্বরের শুরুর দিকে হোটেল মোটেল জোন এলাকায় ইচ্ছেকৃতভাবে ওই নারীকে মোটরসাইকেল নিয়ে ধাক্কা দেন আশিকুল ইসলাম। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এরপরই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত আশিকুলের চক্রটি তাঁদের পেছনে লাগে। ঘটনার দিন স্বামীর কাছ থেকে আশিকুল সমুদ্রসৈকতে ওই নারীর স্বামীর কাছে চাঁদা চান। চাঁদা না দিলে ক্ষতি করার হুমকি দেন। সে সময় ভুক্তভোগী নারী একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ভুক্তভোগী নারীকে ফোন করে তাঁর স্বামী বিষয়টি জানিয়ে তাঁকে হোটেল থেকে নামতে বলেন। কিন্তু এর মধ্যেই খবর পেয়ে আশিকুল হোটেলের সামনে এসে তাঁকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে ঝুপড়িতে নিয়ে যান। তখন আশিকুলের দুই সহযোগী জোর পূর্বকভাবে তাঁকে ধর্ষণ করেন। তখন তিনি সাহায্য চেয়ে চিৎকার করলে দুই তরুণ এগিয়ে আসেন। তখন আশিকুল ওই দুই তরুণকে মারধর করে মুঠোফোন হাতিয়ে নেন। এরপর আশিকুল তাঁকে মোটরসাইকেলে তোলে জিয়া গেস্ট ইনে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রথমে আশিকুল মাদক গ্রহণ করেন। এরপর ধর্ষণ করেন। এ সময় আশিকুলের কাছে একটি ফোন আসে। সেই ফোনে অভিযান চালাবে এমন ইঙ্গিত পেয়ে সে ওই নারীকে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে পালিয়ে যান। 

বর্তমানে ভুক্তভোগী নারীকে ও তাঁর স্বামী-সন্তানকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে টুরিস্ট পুলিশ নিজেদের কার্যালয়ের একটি কক্ষে রেখেছে। গতকাল ভুক্তভোগী নারী ও স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে কথা বলতে এই প্রতিবেদক সেখানে গেলে, টুরিস্ট পুলিশের এসপি জিললুর রহমান তাঁদের সঙ্গে কথা বলা যাবে কি-না, সেটি পরে জানানো হবে বলে জানান। 
অনেকক্ষণ সেখানে অপেক্ষার পরও ভুক্তভোগী নারী ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার অনুমতি মেলেনি। পরে পৌনে চারটার দিকে মামলার বাদী ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। 

তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের তিন তলার একটি কক্ষে আমাদের রাখা হয়েছে। আমরা দুপুরে খাইনি। এখান থেকে চলে যেতে চাই। কিন্তু (পুলিশ) আমাদের যেতে দিচ্ছে না। চার দিন ধরে গোসল করিনি। এখন বাচ্চার মরার অবস্থা হয়ে গেছে। আমরা তিনজনই বর্তমানে অসুস্থ হয়ে গেছি। আমরা মামলার কার্যক্রমে সর্বোচ্চ করতে চাই। তবে এভাবে থাকতে চাচ্ছি না। আমাদের আপাতত বাড়ি (কিশোরগঞ্জে) পাঠিয়ে দেওয়া হোক। বাড়িতে সবাই টেনশন করছেন।’ 

ধর্ষণের শিকার নারী ও তাঁর স্বামী পুলিশ বা আদালতের কাছে তাঁদের নিরাপত্তার অংশ হিসেবে পুলিশের হেফাজতে রাখার বিষয়ে কোনো আবেদন করেননি বলে জানান টুরিস্ট পুলিশের সুপার জিললুর রহমান ও টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ। এরপরও কেন তাঁদের হেফাজতে রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব। আর তাঁর স্বামী এই মামলার বাদী। বাদী মানে কিন্তু সাক্ষী। সেই হিসেবে আমরা তাদের সুরক্ষা দিচ্ছি। মামলাকে প্রমাণ করতে হলে তাঁর (বাদী) সর্বোচ্চ সহায়তা দরকার। সে জন্য তাঁদের আমাদের কাছে রাখা হয়েছে।’ 

ঘটনার পর পুলিশের বক্তব্যে ভুক্তভোগী নারীকে দোষী বানানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল। তবে গতকাল ওই নারীর জবানবন্দির কপি হাতে পাওয়ার পর অবশ্য কিছুটা সুর নরম হয়েছে তাদের। আজ শনিবার টুরিস্ট পুলিশের এসপি জিললুর রহমান তাঁর কার্যালয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাঁকে পর্যটক বলাতেই আমাদের আপত্তি।’ 

পর্যটক বলতে আপত্তি কেন এমন প্রশ্নে টুরিস্ট পুলিশের এসপি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চাকরি কিংবা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ছাড়া যখন কোনো ব্যাক্তি দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনে আসেন, কিছু সময় অতিবাহিত করেন, তখন তিনি পর্যটক। তবে ওই নারী তিন মাস ধরেই কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। সে জন্য আমরা তাঁকে পর্যটক বলতে চাচ্ছি না।’ 

মামলার মূল আসামিদের এখনো ধরতে না পারার বিষয়ে জিললুর রহমান বলেন, ‘আসামিদের ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে। এখন মনে হয় সবার ফোনে তাঁদের ছবি আছে। এ কারণে আসামিরা সতর্ক হয়ে গেছেন। জায়গা পরিবর্তন করছেন। আমরা যৌথভাবে তাঁদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছি। আশা করছি শিগগির তাঁদের ধরতে পারব।’ 

কক্সবাজারের বিশিষ্টজন সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন শহর কক্সবাজারে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ দেখাতে কয়েকটি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের নিজেদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা আছে। এ কারণে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। পুলিশ ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করতে আগেভাগে এগিয়ে না যাওয়ার অভিযোগও ছিল। পরে সেই ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব। এরপর কক্সবাজার সদর থানায় মামলা হয়। আর মামলার তদন্তের ভার পড়েছে টুরিস্ট পুলিশের হাতে। ঘটনার দিনই মামলার চার নম্বর আসামি রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে গ্রেপ্তার করেছিল র‍্যাব। কিন্তু পুলিশের দুই সংস্থা এখনো মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম, মো. বাবু ও ইসরাফিল হুদাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে আছে পুলিশের দুই সংস্থা। সবকিছু মিলিয়ে নিজেদের ‘দুর্বলতা’ আড়াল করতে শুরুতে ভুক্তভোগীকে দোষী বানানোর চেষ্টা করেছিল তাঁরা। 

সবশেষ গতকাল বিকেলে গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি ছোটনকে কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামিমুন তাসনিমের আদালতে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা টুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক রুহুল আমিন। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

হেডফোন কানে রেললাইনে যুবক, ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত

ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবি চবির আধিপত্যবাদবিরোধী শিক্ষক ঐক্যের

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার ঘরে আগুন: মামলা হয়নি, নাশকতার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ মেলেনি

কর্ণফুলীতে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা, আটক ১০

রাউজানে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ৩ বসতঘরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ

কুমিল্লায় একাধিক মামলার আসামি শামীম গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা

লক্ষ্মীপুরে মাটি খুঁড়ে মিলল চট্টগ্রামে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, যুবক গ্রেপ্তার

মিরসরাইয়ে গাড়ির ধাক্কায় ভ্যানচালক নিহত

আনিসুল ইসলামের গ্রামের বাড়িতে হামলা-অগ্নিসংযোগ