রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
সিত্রাংয়ের রাতে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের সেই তিন জেলের এখনো সন্ধান মেলেনি। তাঁরা জীবিত না মৃত গত ১৪ দিনেও এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর সরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে ২-৩ দিন তাঁদের উদ্ধারে তৎপরতা থাকলেও এখন কেউই খোঁজ নিচ্ছেন না। স্বজনহারা পরিবারগুলোতে এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
এদিকে মহাজনের চাপে পাওনা টাকা পরিশোধে সেদিন তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নদীতে নামতে বাধ্য হয়েছেন বলে ওই পরিবারগুলোর অভিযোগ করেছে। ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ওই দিন তাঁদেরকে নদীতে যেতে বাধ্য করা হয়। জেলে নৌকার মালিক রাসেল বেপারী এ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন নিখোঁজ জেলে লিটন বেপারীর স্ত্রী মারুফা বেগম ও সুজন সরদারের মা পারভিন আক্তার।
নিখোঁজ জেলেরা হলেন, উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চর কাছিয়া গ্রামের আবুল কাশেম বেপারীর ছেলে লিটন বেপারী (৩৫), আব্দুর রব বেপারীর ছেলে শিপন বেপারী (২৩) ও রব সরদারের ছেলে সুজন সরদার (২৫)।
নিখোঁজ জেলে সুজন সরদারের মা পারভিন আক্তার বলেন, ‘মহাজন (নৌকার মালিক) রাসেল বেপারীর নৌকার জেলে হিসেবে মাছ ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সুজন এক হাজার টাকা আনে। ওই টাকার জন্য মহাজন আমার ছেলেকে চাপ দিয়ে নদীতে যেতে বাধ্য করেন। ছেলেও দেনা শোধের আশায় নদীতে যায়। ২-৩ দিন খোঁজ করেই তারা আমার ছেলের সন্ধানে এখন নিশ্চুপ। উল্টো আমাদেরকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে মিলাদ ও আল্লাহরওয়াস্তে গরিবদের খাওয়াতে বলেন।’
সুজনের সন্তান সম্ভবা স্ত্রী সুবর্ণা আক্তার (১৮) বলেন, ‘আমি আমার স্বামীকে জীবিত বা মৃত যেকোনো অবস্থাতেই ফিরে পেতে চাই। অনাগত সন্তানকে অন্তত তার বাবার কবরটি দেখিয়ে হলেও সান্ত্বনা দিতে ও নিতে পারব।’
লিটন বেপারীর স্ত্রী মারুফা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ঝড়ের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে যেতে চাননি। কিন্তু মহাজন রাসেল বেপারীর কাছ থেকে নেওয়া ৫০০ টাকার জন্য তিনি আমার স্বামীকে নদীতে যেতে বাধ্য করেন। তাঁর অতি লোভের কারণেই আজ আমি সন্তানরা।’
শিপন বেপারীর মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘লাশ হয়ে ফিরলেও অন্তত শেষবারের মতো আমার নাড়িছেঁড়া ধনকে ছুঁয়ে কবরে দিতে চাই।’
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাশ বলেন, ‘ওই সময় ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা এবং ঝড়ের সতর্কবার্তা থাকার পরেও তাঁদের নদীতে যাওয়া ঠিক হয়নি। এরপরও নিখোঁজদের সন্ধানে ফায়ার সার্ভিস ও মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে তল্লাশি করা হয়েছিল। ফিরে আসাদের চিকিৎসায় ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তাও করা হয়।’