বিগত ২০১৬ সালের ৪ জুন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ সামছুদ্দিন খোকনের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে দিনদুপুরে গুলিতে নিহত হন নুর হোসেন শিপন (২০)। উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ভূঞাঁ বাজার হাজী তোফায়েল আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ঘটনাটি ঘটে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ—গুলিতে হত্যার পর পরিবারকে উল্টো হয়রানি করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের মামলা না নিয়ে উল্টো পুলিশ বাদী হয়ে নিহতের আত্মীয়সহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্রে বাধাদানের মামলা করে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ হয়ে পড়েছেন বাবা।
পুলিশের সেই মামলায় আসামি করা হয় নিহত শিপনের মামা ফকির আহম্মদ এবং স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোস্তফা বাবুল কোম্পানিকে। তাঁরা এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশাররফ হোসেন মিলনের ভাড়া করা লোকজনই গুলি করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে আবার মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া প্রয়োজন। আমরা একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে, কোন প্রক্রিয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
তৎকালীন চরচান্দিয়ার বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সামছুদ্দিন খোকন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভোটের দিন সকালেই আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি আওয়ামী লীগের লোকজন কেন্দ্রগুলো দখল করে নিচ্ছে। আমি নিজেও ভোট দিতে পারিনি। নুর হোসেন শিপন যুবদলের সমর্থক ছিলেন। তিনি কেন্দ্রে নিহত হন। ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকে তাঁর বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। পরিবারের বিভিন্ন সময় খোঁজখবর নিয়েছি। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলব।’
রোববার (১৩ অক্টোবর) সরেজমিনে নিহত শিপনের পরিবারের খোঁজখবর নিতে চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ভূঞাঁর দোকান সংলগ্ন কোরবান আলী বাড়িতে গেলে জানা যায়, একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোক সইতে না পেরে শিপনের বাবা করিমুল হক মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন। এদিকে পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় চার কন্যা সন্তানকে নিয়ে চরম দুঃখ-দুর্দশায় দিনাপাতিত করছেন মা রহিমা খাতুন। তাঁদের থাকার ঘরটির অবস্থা নড়বড়ে। বৃষ্টির সময় টিনের চালা বেয়ে ভেতরে পানি পড়ে। খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটছে পরিবারের মানুষগুলোর।
চরচান্দিয়া ইউনিয়নের সেই সময়কার যুবদলের সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘বিএনপি করার অপরাধেই শিপনকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর তাঁর জানাজা ও লাশ দাফনে পর্যন্ত বাধা দিয়েছে। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার বিচার দাবি করছি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য এস্কান্দার রকি বলেন, ‘শিপনকে হত্যার পর তাঁদের পরিবার অত্যন্ত অসহায় হয়ে যায়। শিপনের বাবাও অসুস্থ হয়ে যায়। তাঁদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদানসহ হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে দলীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ জানাই।’
সোনাগাজী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম ভূঞাঁ বলেন, ‘এরা বিএনপি পরিবার। বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কারণেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার বিচার নিশ্চিত করার জন্য আমরা তাঁদের সহযোগিতা করব।’
এদিকে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে তৎকালীন চরচান্দিয়া ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মিলন দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।