চাঁদপুর প্রতিনিধি
ওমানে অগ্নিকাণ্ডে নিহত চাঁদপুরের শাহরাস্তির হোসেন মিয়াজীর (২২) বাড়িতে চলছে মাতম। একমাত্র ছেলে এবং পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎসকে হারিয়ে নির্বাক বৃদ্ধ আব্দুস সালাম (৭০)। মা নুরজাহানের গগনবিদারী চিৎকারে ভারী হয়ে আছে আশপাশের পরিবেশ।
নিহত হোসেন মিয়াজী ওমানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর বুরাইমির একটি সোফা কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত সোমবার ভোরে ওই কারখানায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে নিহতদের মধ্যে তিনি একজন। তিনি চাঁদপুরের শাহরাস্তি পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিজমেহার গ্রামের যোগীবাড়ির আব্দুস সালামের একমাত্র ছেলে।
পরিবারের সচ্ছলতার আশায় বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ২০১৯ সালে বিদেশে পাঠানো হয় হোসেন মিয়াজীকে। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ঋণের দায় কাটিয়ে উঠতে পারেনি পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে ছেলের মৃত্যুতে ঋণের দায় ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই পরিবারের ওপর।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে হোসেন মিয়াজীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা ও বোনেরা আহাজারি করছেন। বাবা আব্দুস সালাম নির্বাক। হোসেন নিহত হওয়ার খবরে তাঁর বাড়িতে ভিড় করেছেন পাড়া-প্রতিবেশী ও স্বজনেরা।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হোসেনের বাবা আব্দুস সালাম একসময় রিকশা চালাতেন। পরিবারের সচ্ছলতার আশায় ২০১৯ সালে হোসেন ওমানে যান। করোনাকালীন বেকারত্ব ও কাগজপত্র বৈধ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৮ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে।
হোসেনের ছোট বোন মরিয়ম আক্তার বলেন, নিজের ভাইয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শ্বশুরবাড়ি এলাকার এনজিও থেকে ঋণ এনে দিয়েছেন। একটি দুর্ঘটনা একমাত্র ভাইকে তো নিলই, তাঁদেরও সবাইকে পথে বসিয়ে দিল।
হোসেনের মা নুরজাহান বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘বেশি লাভের আশায় ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। আজ আমার সব শেষ। সরকার যেন আমার ছেলের লাশ দেশে এনে দেয়, শেষবারের মতো ছেলেকে দেখতে দেয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। হোসেন অত্যন্ত বিনয়ী ও কর্মঠ ছিল। তাঁর লাশ দেশে আনতে পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।