জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে
দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে নিজ পরিবারের কাছে ফিরেছেন জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পাওয়া এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছান তাঁরা। এখানে বন্দর ও মালিক কর্তৃপক্ষ নাবিকদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন। এখানে অপেক্ষায় ছিলেন নাবিকদের আত্মীয়স্বজনও।
মো. তানভীর আহমেদ। এমভি আবদুল্লাহর ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার। বাসা চট্টগ্রামের সিডিএ ১০ নম্বর এলাকায়। তাঁকে দেখতে দুপুর থেকে অপেক্ষা করছেন মা জ্যোৎস্না বেগম। দুই মাস পর ছেলেকে দেখবেন। তাই দুপুর থেকে ছেলেকে দেখতে চলে এসেছেন তিনি। ছেলের জন্য বাড়িতে রান্না করে রেখেছেন পছন্দের খাবার।
দুপুরে জ্যোৎস্না বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছেলেকে দেখব এর চেয়ে খুশির খবর আর কী আছে। ছেলেকে দেখব বলে, সকাল থেকে রেডি হয়ে আছি। বিকেল ৪টায় পৌঁছাবে, আর তর সইছে না। সে জন্য দুপুরেই বন্দরে চলে আসলাম।’
তিনি বলেন, ‘ছেলে তানভীর যেসব খাবার পছন্দ করেন, সবই রান্না করেছি। যেমন শিম, শুঁটকি ও গরুর মাংস রান্না করেছি।’
তানভীরের স্ত্রী মায়মুনা আক্তার। মুখে চওড়া হাসি নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় ছিলেন।
মাইমুনা আক্তার বলেন, ‘সংসারে স্বামীই তো সবচেয়ে আপন। এই আপনজনের কিছু হলে আমি প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হব। মুক্তি পেয়ে অনেক দিন পর তাকে দেখব। আমি অনেক খুশি।’
জাহাজের আরেক নাবিক আলী হোসেনের শ্বশুর জামাল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে তাঁর জিম্মির খবর। সবার মতো আমার মেয়েও পাগলপ্রায়। এখন মুক্ত হয়ে, দেশে ফিরছেন, এর চেয়ে খুশি আর কিছু নেই।’
এদিকে নাবিকদের পরিবারেও শুরু হয়েছে স্বজনদের ঘরে ফেরার উৎসব। নানা আয়োজনে নাবিকদের বরণ করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন সবাই অধীর আগ্রহে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হয়েছে আজ।
এর আগে আজ মঙ্গলবার দুপুরে মোবাইল ফোনে কথা হয় চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বন্দর এলাকার বাসিন্দা ও জাহাজের নাবিক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন শিমুলের সঙ্গে। সে সময় আজকের পত্রিকাকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমরা জাহাজ থেকে নেমে লাইটার জাহাজে উঠেছি। বিকেলের দিকে বন্দরে পৌঁছাব। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি মিস করছি ঘরে রেখে আসা আমার ছোট্ট দুই কন্যাকে।’
মৃত্যুর দুয়ার থেকে সন্তান ফিরছেন এই আনন্দে মাতোয়ারা শিমুলের মা শাকেরা বেগম। স্বামীহারা এই নারী অধীর অপেক্ষায় ছিলেন ছেলেকে বুকে নেওয়ার জন্য। স্ত্রী ফারজানা আকতার স্বামীর জন্য রেঁধেছেন পছন্দের সব খাবার।
শামসুদ্দিন শিমুলের স্ত্রী ফারজানা সুলতানা বলেন, ‘তাঁর বাড়ি ফেরার কথা শুনে সবাই খুবই আনন্দিত। ঈদের আনন্দ এখন বাড়িতে। সাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি দশার দীর্ঘদিনের কঠিন মুহূর্তের পর তিনি আমাদের মাঝে ফিরবেন, এটা ভাবতেও খুব আনন্দ অনুভব হচ্ছে।’