ফেনীর সোনাগাজীতে হাসিনা আক্তার লিপি (২৫) নামে এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড ও অপরজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ওসমান হায়দার আসামি শফিউল আজম প্রকাশ আজম ভান্ডারিকে মৃত্যুদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। অনাদায়ে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সেই সঙ্গে অপর আসামি রাশেদুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। অনাদায়ে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার হাসিনা আক্তার লিপি উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের স্বরাজপুর গ্রামের মকবুল আহমেদ কনট্রাক্টরের মেয়ে।
নিহত হাসিনা আক্তার লিপির বাবা ও মামলার বাদী মকবুল আহমেদ জানান, ২০০৮ সালের ৪ জানুয়ারি দুপুরে তার মেয়ে হাসিনা আক্তার লিপি তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখতে আজম ভান্ডারির দোকান আজম কম্পিউটারে যান। সেখানে আসামিরা দোকানের দরজা বন্ধ করে তাঁকে ধর্ষণ করে এবং পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মরদেহ দোকানে রেখে তারা দোকান বন্ধ করে দরজায় তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী পরে দরজার তালা ভেঙে হাসিনার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মকবুল আহমেদ আরও জানান, ওই দিন রাতে তিনি বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় সোনাগাজী পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চরগণেশ গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে শফিউল আজম প্রকাশ আজম ভান্ডারি ও একই বাড়ির আবদুল খালেকের ছেলে রাশেদুল ইসলামকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
সোনাগাজী মডেল থানা–পুলিশ বলছে, সোনাগাজী মডেল থানার তৎকালীন এসআই আমজাদ হোসেন দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে ১৪ বছর পর এ রায় ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতের আদেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হাসিনা আক্তার লিপির বড় ভাই মাদ্রাসাশিক্ষক সামছুল হুদা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেরিতে হলেও ফেনীর আদালতে আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। আমরা আশা করি উচ্চ আদালত এ রায় বহাল রাখবেন।’
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন হাজারি বলেন, ‘জঘন্য একটি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে বাদী ন্যায় বিচার পেয়েছেন।’ অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়েজুল হক মিলকি ও অ্যাডভোকেট করিমুল হক দুলাল জানান, তারা মক্কেলদের বিরুদ্ধে রায়ে তারা অসন্তুষ্ট। ন্যায় বিচারের জন্য তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।