চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই ভাঙছে আগের দিনের রেকর্ড। চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে ৫ হাজার ৭৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় প্রায় ২০ গুণ।
জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ থেকে ৩১ ডিসেম্বর জেলার ২৯৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চলতি মাসের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এ সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ৭৪৩-এ দাঁড়ায়। এ হিসাবে চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে আগের মাসের শেষ ২০ দিনের তুলনায় সংক্রমণ বেড়েছে প্রায় ২০ গুণ।
চট্টগ্রামে সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে মৃত্যুর হারও বাড়ছে। ডিসেম্বরে যেখানে মৃত্যু মাত্র একজন, সেখানে চলতি মাসের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মারা গেছেন নয়জন। তবে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা আগে থেকে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আফতাব উল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, শঙ্কিত না হয়ে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এখন পর্যন্ত যারা মারা যাচ্ছেন, তাঁরা সবাই এক বা একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে সংক্রমণ এতটা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) ওমিক্রন শনাক্তের কিটে সাতজনের শরীরে ভাইরাসটির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ওমিক্রনের প্রভাবেই সংক্রমণের হার বুলেট গতিতে বেড়ে যাচ্ছে। তাই এখনই কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা না এলে বাধ্য করে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা কষ্ট। সবার উচিত অপ্রয়োজনে বের না হওয়া।
এদিকে বেশির ভাগ করোনা আক্রান্তদের বেশির ভাগই বাসায় আইসোলেশনে থাকছেন। তাঁদের কেউ কেউ ভার্চুয়ালি চিকিৎসকের পরামর্শ চালু রাখার বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগকে।
বাকলিয়া বড়মিয়া মসজিদ এলাকার বাসিন্দা মো. আমিনুল ইসলাম দুদিন ধরে করোনা পজিটিভ হয়ে বাসায় আইসোলেশনে আছেন। একেকদিন তাঁর একেক রকম সমস্যা হচ্ছে। তিনি জানান, শনাক্ত হওয়ার প্রথম দিন প্রচণ্ড গলা ব্যথা ছিল তাঁর। দ্বিতীয় দিন পাতলা পায়খানা এবং জ্বর ছিল। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে ভার্চুয়ালি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গেলে অনেক ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলত। জ্বর থাকলে প্রাইভেট চিকিৎসকও দেখেন না। অনলাইনে পরামর্শ নিলে অনেক রোগী সুস্থ হয়ে যেত।’
চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এস এম হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক। কারণ, মৃত্যুহার কম। ওমিক্রন আক্রান্তদের হাসপাতালেও ভর্তি হতে হচ্ছে না। প্যারাসিটামল খেলেই ভালো হয়ে যাচ্ছে। এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি জটিল হলে তখন বিভাগীয় পর্যায়ে অনলাইন চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।’