স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রামের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক মো. শরীফ মাহমুদ অপুকে আটকের পর রাতভর থানায় রেখে পরদিন ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রথম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে দুপুরে তাঁকে ডবলমুরিং থানা থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিকুল ইসলাম শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুপুরে ওনাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান করা হয়েছে। সম্ভবত পরে দুদক তাঁদের একটি মামলায় এই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখাতে পারে।’
আদালতের জিআরও শাখার পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশ ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওনাকে কারাগারে আটক রাখার একটি আবেদন করেছেন। এ সময় শুনানি শেষে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
দুদকের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, ‘আজ আদালত বন্ধ থাকায় দুদকের কোনো মামলার শুনানি নেই। রোববার কর্মদিবসে ওনার (সাবেক স্বরাষ্ট্র কর্মকর্তা) বিষয়ে জানা যাবে, যদি ওনাকে শ্যোন অ্যারেস্ট (গ্রেপ্তার) দেখানো হয়ে থাকে।’
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের আগ্রাবাদে বাংলাদেশ বেতারের নিজ কার্যালয়ে এই কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেলে গিয়ে তাঁকে হেফাজতে নেয় ডবলমুরিং থানা-পুলিশ। কোনো ফৌজদারি মামলা না থাকায় পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
বেতার সূত্রে জানা যায়, শরীফ মাহমুদ অপু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কয়েক বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বদলি করে বাংলাদেশ বেতারে পাঠানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের দাবি, গত বছরের ৪ আগস্ট অপুর স্বাক্ষরিত চিঠিতে দেশে কারফিউ জারি হয়েছিল। তাঁকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যায়িত করে গতকাল একদল শিক্ষার্থী বেতার ভবনে গিয়ে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাঁরা তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীফ মাহমুদ অপু কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ণমতি গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবেদিনের ছেলে। তাঁর বাবা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
চলতি বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় সাবেক স্বরাষ্ট্র কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপুর বিরুদ্ধে ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে। একই সময় দুদক কারাগারে আটক পুলিশের ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলামসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরও এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছিল।