চট্টগ্রাম নগরের কাতালগঞ্জে বেসরকারি হাসপাতাল ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক ও কনসালটেশন সেন্টারে সকাল থেকে প্রধান ফটকের শাটার অর্ধেক নামানো দেখা গেছে। ভেতরে লোকজন দেখা গেলেও কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দরজার বাইরে নোটিশ বোর্ডে লাগানো। তাতে লেখা আছে ‘আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সকল প্রকার প্রাইভেট প্র্যাক্টিস বন্ধ থাকবে।’ এ অবস্থায় সেবা না পেয়ে রোগীসহ স্বজনদের ফিরে যেতে দেখা গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা।
এ চিত্র নগরের সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। জেলায় ৫ শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সম্প্রতি দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার দাবিতে চট্টগ্রামে চিকিৎসকেরা ২৪ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করছেন।
আর তাতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চট্টগ্রামবাসীসহ দূর–দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। তাঁরা চিকিৎসক দেখাতে না পারার পাশাপাশি রোগের কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারছেন না।
আবদুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে নেওয়া সিদ্ধান্তকে একাত্মতা প্রকাশ করে হাসপাতালে সব ধরনের সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।’
তবে ওই হাসপাতালে আগে থেকে ভর্তি থাকা এক রোগীর স্বজন মো. তৌহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঈদের পরদিন থেকে তাঁর বাচ্চাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ডাক্তারদের ধর্মঘটের বিষয় তিনিও জেনেছেন।
একই চিত্র দেখা গেছে পাঁচলাইশে সার্জিস্কোপ হসপিটাল লিমিটেডে। সেখানে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ, নতুন রোগী ভর্তি ও সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
দুপুর ১টা নাগাদ হাসপাতাল রিসেপশনে থাকা এক নারী আজ মঙ্গলবার বাদে বুধবারে ডাক্তার দেখানোর জন্য রোগীদের সিরিয়াল দিচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের প্রবর্তক মোড়সহ সব ধরনের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একই চিত্র। রোগী দেখাতে না পারার পাশাপাশি কোনো পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হচ্ছে না। বেশির ভাগ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে শাটার বন্ধ রাখা অবস্থায় আছে।
বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যখন সেবা বন্ধ তখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড় ছিল। সকাল থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীদের লম্বা লাইন ছিল। নারী, শিশু থেকে সব বয়সীরা ভিড় করছে। হাসপাতালে আউটডোরেও উপচে পড়া ভিড় ছিল।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, ১০ এপ্রিল পটিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত এক রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরি করার অভিযোগে ডা. রক্তিম দাশকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় ১১ এপ্রিল রাতে হাসপাতালটির নির্বাহী পরিচালক এস এইচ খাদেমী বাদী হয়ে পটিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ সৈয়দসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বিএমএ চিকিৎসক রক্তিম দাশের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি ও চিকিৎসক শিবলুর ওপর হামলাকারীদের জামিন বাতিলের দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছিল। গত ২২ এপ্রিল পরে সংগঠনটি কর্মবিরতি কর্মসূচি দেন।