কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় ১৯৮০ সালে রামু উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় উপজেলার মানুষদের জ্ঞান চর্চার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ছিল লাইব্রেরিটি। কিন্তু বর্তমানে বয়সের ভারে যেন নুইয়ে পড়েছে রামু পাবলিক লাইব্রেরি।
প্রথমদিকে রামু থানা ছিল, ১৯৮৩ সালে এসে রামু থানাকে রামু উপজেলা করা হয়। উপজেলা গঠনের আগে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল রামু পাবলিক লাইব্রেরিটি। প্রায় চল্লিশ বছরেরও পুরোনো ঐতিহাসিক এই লাইব্রেরিটি বর্তমানে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। বিগত তিন বছর ধরে এটি বন্ধ।
একসময় এখানে রামু উপজেলার সর্বস্তরের পাঠকের সরব উপস্থিতি থাকলেও এখন কেউ চাইলেও এখানে আসতে পারেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার শহীদ মিনারের সামনে অবস্থিত এই পাবলিক লাইব্রেরিতে সরেজমিনে দেখা যায়, লাইব্রেরিতে তালা ঝুলছে। লাইব্রেরির সামনে পরিত্যক্ত একটি গাড়ি ফেলে রাখা হয়েছে।
কেন বন্ধ হয়ে গেছে রামুর ঐতিহাসিক এবং জ্ঞান আহরণের একমাত্র এই পাবলিক লাইব্রেরিটি এমন প্রশ্নের জবাবে রামু কলেজের প্রভাষক মুজিবুল হক বলেন, ‘এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন এবং ভারী। তবুও বলতে হয় বন্ধ হওয়ার মূল কারণ সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। একসময় লাইব্রেরির সঙ্গে লাগানো দুটি দোকানের ভাড়া নিয়ে আমরা লাইব্রেরির বিবিধ খরচ মেটাতাম এবং এখানে যে লাইব্রেরিয়ান ছিল তার বেতন দিতাম। অনেক আগে থেকে তা আমরা আর পাচ্ছি না।’
রামু পাবলিক লাইব্রেরির আরেক সংগঠক ও হাজী এম. এ কালাম সরকারি কলেজের অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন এবং রামুর সুশীল সমাজ একটু সুদৃষ্টি দিলেই আবারও প্রাণ ফিরে পাবে এই পাবলিক লাইব্রেরিটি। আমাদের এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ চোখের সামনে ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না। আমি উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গদের কাছে অনুরোধ করব এই লাইব্রেরি যেন চালু করা হয়।’
অর্পিতা শর্মা রামু উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে তিনি দেশের একটি স্বনামধন্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যখন দশম শ্রেণিতে পড়তাম প্রতিদিন বিকেল বেলা একবার রামু উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে যেতাম। বই ধার নেওয়ার সুযোগ ছিল। সময়ের পালাক্রমে চোখের সামনে এই লাইব্রেরিটি বন্ধ হয়ে গেল। এমন সচল লাইব্রেরির বন্ধ চেহারা দেখতে খুব কষ্ট লাগে।’
রামুর বিশিষ্টজন ও সাহিত্য অনুরাগী ব্যক্তিবর্গের প্রাণের দাবি আবারও সচল হোক রামু উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরিটি। আবারও যাতে সবাই এক জায়গায় বসে সাহিত্য আড্ডা, সমালোচনা ও বইয়ের ভাঁজে হারিয়ে যেতে পারেন। এমন গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠানটি চালু হবে কিনা এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করবে কিনা তা দেখার বিষয় বলছেন সংশ্লিষ্টরা।