দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লার দেবিদ্বারে চাঞ্চল্যকর শিশু ফাহিমা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ফাহিমার বাবা আমির হোসেনের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন আমিরের মা নাছিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার বুকে আগলে রেখে ফাহিমাকে লালন পালন করেছি। আমার ঘরে একটি মাত্রই শিশু ছিল ফাহিমা। সেটি আমার কোল থেকে কেড়ে নিয়েছে আমির। এমন পাষণ্ড ছেলের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। আমি তাঁর ফাঁসির দাবি জানাই।’
আজ বৃহস্পতিবার আমির হোসেনের মা নাছিমা বেগম তাঁর নিজ বাড়িতে এসব কথা বলেন।
অন্যদিকে, শিশু ফাহিমার মা হোসনেয়ারা বেগমও তাঁর স্বামী আমির হোসেনের ফাঁসির দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘বাবা হয়ে নিজের মেয়েকে কেউ এভাবে মারতে পারে না। আমি আমার স্বামীসহ যারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাঁদের সকলের ফাঁসি চাই।’
এর আগে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফাহিমা হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামি আমির হোসেনসহ গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনকে কুমিল্লা ৪ নম্বর আদালতের বিচারক ফারহানা সুলতানার আদালতে তোলা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-ফাহিমার বাবা মো. আমির হোসেন (২৫), মো. রবিউল আউয়াল (১৯), মো. রেজাউল ইসলাম ইমন (২২), মোসা. লাইলি আক্তার (৩০) ও মো. সোহেল রানা (২৭)। তাঁদের সবার বাড়ি দেবিদ্বার পৌর এলাকার চাপানগর গ্রামে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, ‘শিশু ফাহিমা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ফাহিমার বাবাসহ পাঁচজন আসামিকে আদালতে তুললে আসামি লাইলি আক্তার হত্যাকাণ্ডের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বাকি চারজনের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিশু ফাহিমা (৫) তার বাবা আমির হোসেন ও পরকীয়া প্রেমিকা লাইলি আক্তারকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে। এতে লাইলি আক্তার ও আমির হোসেন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এই বিষয়টি যেন কেউ জানতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লাইলি আক্তার আমির হোসেনকে চাপ দিতে থাকে। পরে লাইলি আক্তারের প্ররোচনায় গত ৬ নভেম্বর শিশু ফাহিমার বাবা আমির হোসেন, মো. রবিউল আউয়াল, মো. রেজাউল ইসলাম ইমন, লাইলি আক্তার ও মো. সোহেল রানা পূর্বপরিকল্পিতভাবে শিশু ফাহিমাকে বেড়ানোর কথা বলে দেবিদ্বার পুরোনো বাজার এলাকার গোমতীর দক্ষিণ দিকে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়।
এরপর গলায় ও পায়ে ছুরি চালিয়ে এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর প্লাস্টিকের দুটি বস্তাবন্দী করে দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের কাচিসাইর এলাকার নজরুল মাস্টারের বাড়ির একটি সরকারি কালভার্টের নিচে ফেলে যায়। এরপর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত শিশু ফাহিমার বাবাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
দেবিদ্বার থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘শিশু ফাহিমা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ফাহিমার বাবাসহ পাঁচ আসামিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। যারাই অপরাধে জড়িত হবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’