নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ঋণের টাকার জন্য বারবার চাপ দেওয়ায় বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কর্মকর্তা চম্পা চাকমাকে (২৮) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। পরে পালিয়ে সিলেটের একটি হোটেলে ২০০ টাকা বেতনের চাকরি নেন ঘাতক এনামুল হক (২৭)। গতকাল সোমবার রাতে সিলেটের জৈন্তাপুর থানার আসামপুর এলাকার ওই হোটেল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তার এনামুল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর পারুয়া গ্রামের বাসিন্দা। নিহত চম্পা চাকমা রাঙামাটির বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ছাক্রাছড়ি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিহত চম্পা চাকমা বেসরকারি মানবিক সংস্থা ‘পদক্ষেপ’-এর রাঙ্গুনিয়া শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ২০ এপ্রিল এনামুল ওই এনজিও থেকে তাঁর মা ও বোনের নামে ৩ লাখ টাকা ঋণ নেন।
পরবর্তী সময়ে এনামুল ঋণের ৪০ কিস্তি পরিশোধ করলেও তাঁর বোনের নামে আরও ছয় কিস্তি বাকি ছিল। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে এনজিওর পক্ষ থেকে তাঁকে চাপ দেওয়া হয়। গত ৫ মার্চ রাতে চম্পা চাকমা এক সহকর্মীসহ রাঙ্গুনিয়া অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলেন। পথে রাঙ্গুনিয়া থানার ধামরাইহাট এলাকায় তাঁদের দেখা হলে ঋণের কিস্তি নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, চম্পা চাকমাকে এনামুল তাঁর বোনের ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু এনজিও থেকে বলা হয়, ঋণের টাকা নিতে তাঁরা এনামুলের বোনের বাড়ি যাবেন। এনামুলের ভগ্নিপতি বিদেশে থাকেন। এতে তাঁর মানসম্মান যাবে ভেবে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে চম্পার শ্বাসনালিতে আঘাত করে পালিয়ে যান। চম্পাকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় চম্পার ভগ্নিপতি বাদী হয়ে পরদিন ৬ মার্চ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঋণের টাকার জন্য চাপ দিলে আগেও চম্পা চাকমাকে একাধিকবার হুমকি দিয়েছিলেন এনামুল। পরে পরিকল্পনামতো তিনি সঙ্গে ছুরি রাখেন।
র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর এনামুল কয়েক দিন রাঙামাটি, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, চকবাজার, ঢাকার পোস্তগোলা এবং সর্বশেষ সিলেটের জৈন্তাপুরে গিয়ে দৈনিক ২০০ টাকা বেতনে হোটেলে কাজ নেন। গতকাল সোমবার এ সংবাদ পাওয়ার পর সেখানে র্যাব-৯-এর সহায়তায় আমরা এনামুলকে ওই হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি খুনের কথা স্বীকার করেছেন। মূলত ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থতা এবং এনজিওর পক্ষ থেকে বারবার চাপ দেওয়ায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মিলকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, আজ মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে আসামি এনামকে থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।