নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
‘এখানে চারিদিকে ধোঁয়া, আমরা সবাই আটকা পড়েছি, বের হতে পারছি না, আমার গলা জ্বলছে, দম বন্ধ হয়ে আসছে।’ তখন রাত আড়াইটা। মৃত্যুর আগমুহূর্তে মালিককে এমনই ভয়েস রেকর্ড পাঠান চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দীন বাজার মোহাম্মদীয়া কমপ্লেক্স আজুয়াদ টেলিকমের কর্মচারী শাহেদ। ওই টেলিকমের মালিক সাজ্জাদ মিয়ার কাছে এই বার্তা পাঠান তিনি। পরে আজ শুক্রবার ভোরে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বন্দরনগরীর রিয়াজউদ্দীন বাজারে তামাকুমণ্ডি লেইনে রেজওয়ান কমপ্লেক্স ও মোহাম্মদীয়া প্লাজা নামে ওই দুটি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাহেদসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
নিহতরা হলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মো. শাহেদ মিয়া (১৮), একই উপজেলার মো. রিদুয়ান (৪৫) ও বাকি একজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। এ ঘটনায় দগ্ধ আরও দুজনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনজনই মোহাম্মদীয়া প্লাজা মার্কেটের কর্মচারী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে মোহাম্মদীয়া কমপ্লেক্স নামে একটি মার্কেটে দ্বিতীয় তলায় ব্রাদার্স টেলিকম নামের একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর পাশের মার্কেটেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগলেও পঞ্চম তলায় থেকে সাহেদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে মেসে শাহেদসহ অন্যরা থাকতেন।
আজ মার্কেটের দোকানপাট বন্ধ থাকায় তেমন লোকজন না থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষ পেয়েছে বলে জানান মার্কেটের কর্মচারীরা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুর রাজ্জাক জানান, আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে ভোর সাড়ে ৫টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে প্রথমে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বাকিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে দুজন মারা যান। আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নুরুল আলম আশেক বলেন, ‘হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে তাঁরা মারা গেছেন।’ এ ছাড়া আরও দুজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে জানান তিনি।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, মার্কেটের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় মোবাইল এক্সেসরিজ, তৃতীয় তলা থেকে অফিস, গুদাম ও মেস আছে। বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীরা ওই মেসে থাকতেন।
ফায়ার সার্ভিস বিভিন্ন সময়ে বলে আসছে, এখানকার তামাকুমণ্ডি লেইনের ভবনগুলোর কোনোটিতেই মানা হয়নি বিল্ডিং কোড। পর্যাপ্ত জায়গা এবং অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থাও নেই। এতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে ঢুকতে না পারায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নোটিশ দিয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হলেও তা নিয়ে উদ্যোগও নেই তাঁদের।