মো. মাসুম, টংগিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ)
মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের একটি ট্রলার ডুবে গেছে। এতে আট জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার তালতলা-গৌরগঞ্জ খালের রসকাঠি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৬ জন। নিহত আট জনের মধ্যে একই পরিবারের ৪ জন রয়েছেন। তারা হলেন মোসা: এপি ও তার তিন ছেলে রাকিবুল, শাকিবুল ও সাজিদুল। নিহত এপির ভাই রুবেল তাদের লাশ শনাক্ত করেন। রুবেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিহতদের মধ্যে তার বোন এপি এবং তিন ভাগনে রয়েছে। আরও তিন জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন পপি, মাকসুদা ও হুমায়রা।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আবু জাফর রিপন জানান, এখন পর্যন্ত ৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন অপ্রাপ্তবয়স্ক, বাকি চারজন নারী।
এর আগে লৌহজং ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার কায়েস আহম্মেদ জানান, ‘রাত ৮টার দিকে আমরা ঘটনার খবর পাই। ঘটনাস্থলে আসার পর দেখি স্থানীয়রা ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। আমরা একজনের লাশ উদ্ধার করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পিকনিকের ট্রলারে ৪৬ জন আরোহী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে এখনো ৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন।’
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুরের পর সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের ৪৬ জন শিশু, নারী ও পুরুষ পদ্মা নদীতে ট্রলারে করে পিকনিকে যায়। পিকনিক শেষে ট্রলারটি উচ্চশব্দে সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে রাতে তালতলা-গৌরগঞ্জ খাল দিয়ে লতব্দী ইউনিয়নের দিকে যাচ্ছিল। বিপরীত দিক থেকে একটি বাল্কহেড বালু আনতে পদ্মা নদীর দিকে যাচ্ছিল। রাত ৮টার দিকে ট্রলারটি লৌহজংয়ের রসকাঠি এলাকায় আসে। তখন বাল্কহেডটি ওই ট্রলারের ওপর উঠিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ট্রলারটি পানিতে তলিয়ে যায়। অধিকাংশ আরোহী সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছেন।
লৌহজং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অখিল রঞ্জন সরকার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের সামনে একটি নারীর লাশ রয়েছে। বাকিদের লাশ হাসপাতাল থেকে তাঁদের বাড়িতে নেওয়া হয়েছে শুনেছি। তবে কারও পরিচয় জানা যায়নি। নিখোঁজদের উদ্ধারে কাজ চলছে।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, উঠতি বয়সী ছেলেরা ট্রলারে করে পিকনিকে যায়। বিকট শব্দে সাউন্ড সিস্টেম বাজায়। আশেপাশে কোনো কিছু তারা খেয়াল করে না। প্রত্যেক বর্ষা মৌসুমে এই খাল দিয়ে শত শত বাল্কহেড বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা তারা এ পথে যাতায়াত করে। এতে প্রায় সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গত বছর এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় প্রশাসনের নজরদারিতে কিছুদিন বাল্কহেড চলাচল বন্ধ ছিল। এবার আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। এ পথে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ করার দাবি জানান স্থানীয়রা।