নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আশ্রমের নামে প্রতারণা, কিডনি, মানব পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া মিল্টন সমাদ্দার টাকার জন্য লাশের সংখ্যা বাড়িয়ে বলার কথা স্বীকার করেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছেন, মানুষের সহানুভূতি ও টাকা পাওয়ার জন্যই লাশের সংখ্যা বাড়িয়ে বলে ভিডিও বানিয়ে ফেসবুকে দিতেন। তবে তাঁর কাছ থেকে অসহায় মানুষের কিডনি পাচার ও মানব পাচারের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানায় ডিবি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ৯০০ লাশ দাফন করা হয়েছে—এমন ভিডিও মিল্টন মানুষের সহানুভূতি ও টাকার জন্য করেছেন। ডিবি কর্মকর্তারা তাঁর কাছে ৯০০ লাশ কোথায় কবর দেওয়া হয়েছে, সেটি জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মিল্টন ১৩৫টি লাশ দাফন করার কথা স্বীকার করলেও সেসব লাশের ব্যাপারেও কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি।
মানব পাচারের মামলায় চার দিনের রিমান্ড (জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজত) শেষে মিল্টনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরী গতকাল বিকেলে মিল্টনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মিল্টন সমাদ্দার ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের একটি আশ্রয়কেন্দ্রের চেয়ারম্যান। জালিয়াতির মাধ্যমে চিকিৎসক সেজে মৃত ব্যক্তির সনদ দেওয়াসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত সপ্তাহে তাঁকে আটক করে ডিবি। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘অনাথ-অসহায় মানুষের ভিডিও ফেসবুকে দিয়ে সে (মিল্টন) মানুষের বিবেককে নাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আর মানুষও তাকে বিশ্বাস করে বিকাশ-নগদের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই আশ্রমে কোনো ডাক্তার রাখেনি সে। ছোটখাটো বিভিন্ন অপারেশন সে নিজেই করেছে। তবে কিডনি পাচারের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়নি।’
জাল মৃত্যুসনদ ইস্যু করার মামলায় ২ মে মিল্টনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। এর আগে ১ মে সন্ধ্যায় মিরপুর থেকে তাঁকে আটক করে পুলিশ। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে মৃত্যুসনদ তৈরি করার অভিযোগে পরদিন ডিবির এসআই মো. কামাল পাশা মিরপুর থানায় মামলা করেন। একই সময়ে মানব পাচার এবং বেআইনিভাবে অন্যকে আটক রেখে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মিরপুর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করা হয়।