নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া ল্যাবএইড হাসপাতালে ৫ আগস্ট ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের গুলিতে আবুল হাসান স্বজন (২৫) গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তবে মৃত্যুর আগে শেষবারের মতো হাসি ফুটেছিল স্বজনের। সেই হাসির রহস্য জন্ম দিয়েছে এক বিস্ময়ের।
নিহতের বড় ভাই অনিকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। অনিক এবং স্বজন দুজনই ছিলেন আন্দোলনে। ঘটনার দিন একসঙ্গে বাসা থেকে বের হওয়া থেকে শুরু করে ভাইয়ের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাশে ছিলেন অনিক। ভাইয়ের মৃত্যু যেমন তাঁকে শোকাহত করেছে, তেমনি মৃত্যুর আগে স্বজনের দৃঢ়তায় গর্বিত তিনি।
অনিক বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর স্বজনকে ঢাকা মেডিকেলে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা অপারেশন করে গুলি বের করা হয়। এরপর কেবিনে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর স্বজনের জ্ঞান ফেরে। নার্স বলল পাঁচ মিনিটের জন্য দেখা করতে পারবেন। আমি ভেতরে ঢুকতেই আমাকে জিজ্ঞেস করল, “শেখ হাসিনা পদত্যাগ করছে?” আমি বললাম, “এখন এগুলা ভাবতে হবে না। আগে সুস্থ হ।” এক ঘণ্টা পর আবার দেখা করার সুযোগ আসলে তখনো আমাকে জিজ্ঞাস করল শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছে কি না? তখন বললাম, “হ্যাঁ, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালাইছে।” এই কথা শুনে স্বজন মুখে একটা মুচকি হাসি দিয়া কইলো আলহামদুলিল্লাহ। এইটাই ছিল স্বজনের শেষ হাসি।’
পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, আবুল হাসান স্বজন বন্দর উপজেলার বন্দর ইউনিয়নের কুশিয়ারা এলাকায় বেড়ে উঠেছে। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে হাজী আব্দুল মালেক উচ্চবিদ্যালয়ে। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিংয়ের কাজ করতেন। পরিবারের সব সদস্যই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলের অনুসারী ছিলেন স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা।
ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে অনিক বলেন, ‘৫ আগস্ট সকালে আমি আর স্বজন একসাথে বের হই। প্রতিদিনই আমরা আন্দোলনে ছিলাম। ঘটনার দিন পুলিশ চাষাঢ়ায় এসে আমাদের ওপর টিয়ারশেল, শটগানের গুলি ছুড়ে। কিছুক্ষণ ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার পর ল্যাবএইডের গলি থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের লোকজন পিস্তল, শটগান, রাইফেল নিয়ে আমাদের ওপর গুলি চালায়। ছাত্ররা ধাওয়া দিলে তারা ল্যাবএইডের গলির ভেতর থেকে গুলি চালাচ্ছিল। বেলা সোয়া ১টার দিকে আমার ভাই গলিতে ঢুকলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে। আহত অবস্থায় আশপাশের শিক্ষার্থীরা উদ্ধার করে তাকে প্রথমে ভিক্টোরিয়া ও পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাই। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ আগস্ট মারা যায় স্বজন।’
অনিকের দাবি, নাইন এমএম পিস্তল দিয়ে তাঁকে গুলি করা হয়েছিল। ঢাকা মেডিকেলে অপারেশন করা ডাক্তাররা তাঁকে জানান, স্বজনের পেট থেকে নাইন এমএম পিস্তলের গুলি বের করা হয়। ঘটনার দিন শামীম ওসমানের নির্দেশে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায়। প্রায় তিন শতাধিক সন্ত্রাসী দফায় দফায় গুলি বর্ষণ করেছিল চাষাঢ়া গোলচত্বর এলাকায়।
নিহতের বাবা জাকির হোসেন গর্ব করে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে আন্দোলনে গেছে। আমার এক ছেলে ফিরছে, আরেক ছেলে শহীদ হইছে। শেখ হাসিনা সরকার থাকলে বিচার চাইতাম না। এখন তো সরকার পাল্টাইছে। আমি বলমু আমার পোলারে যারা মারছে সরকার যেন তাদের বিচার করে।’