‘যেই শার্টটা ৩০০ টাকায় কিনলাম, এইটা শোরুমে গেলে হাজারের নিচে পাইতাম না। শার্টের গায়ে তো ফুটপাত বা শোরুম লেখা নাই। তাইলে বেশি দাম দিয়া শোরুম হাঁকানোর দরকার কী?’
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতে গতকাল শুক্রবার ঈদের কেনাকাটা করতে আসা তরুণ আসাদুর রহমান এভাবেই জানালেন তাঁর অভিজ্ঞতা।
আসাদুর জানান, পড়াশোনার পাট চুকলেও এখনো চাকরি জোটেনি। কয়েকটা টিউশনি করে নিজের খরচ চালান। গ্রামের বাড়িতেও পাঠাতে হয় কিছু টাকা। ঈদে পরিবারের সদস্যদের জন্য সামান্য হলেও কিছু নিতে হবে। তাই বিপণিবিতানের দিকে না গিয়ে ফুটপাত থেকে কিনছেন সবকিছু।
আসাদুরের মতো সাধ আর সাধ্যের মধ্যে ঈদের কেনাকাটা সারতে অনেকে বিপণিবিতান ছেড়ে ঝুঁকছেন ফুটপাতের দিকে। সেখানকার বিক্রেতারা জানান, ১০ রোজার পর থেকে জমে উঠেছে বেচাকেনা। সায়েন্স ল্যাব, এলিফ্যান্ট রোড, নীলক্ষেত মোড় ও নিউমার্কেটের আশপাশ এলাকায় বসেছে ১ হাজারের বেশি অস্থায়ী দোকান। কেউ চৌকি পেতে, কেউ কাঠের টেবিল বা ভ্যানের ওপর, কেউ হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে; আবার কেউ চাদর বিছিয়ে পসরা সাজিয়েছেন। জামা, জুতা, ব্যাগ, প্রসাধনীসহ ঈদের প্রয়োজনীয় সবকিছু মিলছে সেখানে।
গাউছিয়া মার্কেটের সামনের ফুটপাতে জুতার দরদাম করছিলেন সাবিকুন নাহার। তিনি বলেন, ‘শোরুমে ঢুকলেই বিশাল একটা দাম বলে। দরদাম করতেও লজ্জা পাইতে হয়। এর চেয়ে ফুটপাতই ভালো। এখানেও শুরুতে দাম বেশি বলে; কিন্তু দরদাম কইরা অর্ধেকের কমে নামানো যায়।’
নিউমার্কেট এলাকার অস্থায়ী দোকান ঘুরে দেখা যায়, মেয়েদের থ্রি-পিস ৩৫০ থেকে ৭০০, টপস ও কুর্তি ২৫০ থেকে ৫০০, পার্টি ড্রেস বা গাউন ৬০০ থেকে ১ হাজার ৫০০, স্যান্ডেল ও জুতা ১৫০ থেকে ৬০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। শিশুদের জন্য ডেনিম (জিনস) প্যান্ট ১৫০ থেকে ৪০০, গেঞ্জির সেট ২০০ থেকে ৪০০, ফ্রক ২৫০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। রাজধানীর ইসলামপুর, টঙ্গী ও সদরঘাটের বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে এসব আনা হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।
গাউছিয়া মার্কেটের সামনের ফুটপাতের ব্যবসায়ী তারেক মোল্লা বলেন, ‘শোরুমের মাল আর আমগো মালে তফাত নাই। ওগো শোরুম ভাড়া, কারেন্ট বিল দেওন লাগে। আমরা এই দিক দিয়া ফ্রি। কিন্তু আমগোও খরচ আছে। কাস্টমাররা সেইটা বুঝতে চায় না। তারা পারলে ফ্রিতে নিতে চায়।’
ফুটপাতের অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা জানান, চাঁদরাত পর্যন্ত চলবে ফুটপাতের বিকিকিনি। এরপর ঘরে ফিরবেন এই অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা।