মাত্র ২৩ বছর বয়সেই পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে রেস্তোরাঁয় চাকরি নিয়েছিলেন শান্ত। প্রবাসে সুবিধা করতে না পেরে কাজ নিয়েছিলেন বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের একটি রেস্তোরাঁয়। পরিবারের চিন্তা করে নিজের পড়াশোনা বিসর্জন দেওয়া এই যুবক আজ শুক্রবার বাড়ি ফিরেছেন লাশ হয়ে। মায়ের আহাজারি আর প্রতিবেশী ও শান্তর সমবয়সীদের চোখেমুখে হাহাকার।
মৃত্যুর আগে শান্ত মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে গেছেন। তাঁর মা রোকেয়া আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে কখনও ভিডিও কল দেয় না। কাল রাইতে মোবাইলে ভিডিও কল দিসে। আমাগো সবার খোঁজ খবর নিসে। আমি ওর কথা হুইন্না জিগাইলাম তর কি হইসে? আমারে কইলো কিছু হয় নাই। ফোন রাখার আগে কইলো তোমরা ভালো থাইকো মা। এর কিছুক্ষণ পর হুনলাম পোলার রেস্তোরাঁয় আগুন লাগছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজ ভবনের অগ্নিকান্ডে নিহতদের একজন শান্ত। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন ভুইগড় পশ্চিমপাড়া এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে। সন্তানের মৃত্যুর সংবাদে মোবাইলে ফোন দিয়ে বুকফাটা আর্তনাদ করে যাচ্ছেন প্রবাসী বাবা আমজাদ। বছরখানেক আগে তাঁর সঙ্গেই সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন শান্ত।
নিহত শান্তের স্বজনরা বলেন, শান্ত তাঁর নামের মতোই ছিলেন। দুই ভাই ও একবোনের মধ্যে শান্ত সবার বড়। অল্প বয়সেই পরিবারের প্রতি দায়িত্ব তাঁর ওপর পড়ে। তাঁর বাবা বিদেশে ব্যবসা করে সুবিধা করতে পারছিলেন না। সেজন্য পড়াশোনা বাদ দিয়ে শান্ত নিজেই বাবাকে সহায়তা করতে যায়। সেখানে পরিস্থিতি অনুকুলে না আসায় দেশে ফিরে চাকরি নিয়েছে রেস্তোরাঁয়। এখন পরিবারে হাল ধরার মতো মানুষও নেই।
মৃত্যুর সংবাদে পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে উপস্থিত হন স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমার এলাকার বাসিন্দা হিসেবে তাদের আগে থেকেই চিনতাম। ছেলেটার বাবা বিদেশে, আসতে পারছে না। তাদের আর্থিক অবস্থাও তত ভালো নয়। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকতে তাদের যেন আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়।’