কিশোরগঞ্জে নিজের স্ত্রীকে ঘরে রেখেই তাঁর এক কোটি ৭৬ লাখ টাকা মূল্যের জমি অন্য এক নারীকে ভুয়া স্ত্রী সাজিয়ে রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। ডিজিটাল যুগেও এমন ঘটনা জানাজানি হওয়ায় কিশোরগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়সহ পুরো জেলা শহরে এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
জানা যায়, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের মজুমদারপাড়া গ্রামের মোছা. মার্জিয়া খানমকে তাঁর স্বামী এ কে এম সেলিম ভূইয়া মাইজখাপন মৌজায় ২০১৪ সালে ৪৭৫২ নম্বর দলিল মূলে হেবা ঘোষণার মাধ্যমে ১ একর ৪৭ শতাংশ ভূমি হস্তান্তর করেন।
চলতি বছরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি অন্য আরেক মহিলাকে নিজের স্ত্রী মার্জিয়া আক্তার পরিচয় দিয়ে ও দাতা সাজিয়ে উক্ত ভূমি একেএম সেলিম ভূইয়া নিজ নামে দলিল রেজিস্ট্রি করে নেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভুয়া দাতা সাজিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে প্রকৃত স্ত্রী মার্জিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি জালিয়াতি করে দলিল লেখক ফারুক আহমেদ বাবু দলিলটি রেজিস্ট্রি করে দেন।
আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে মিলেছে বানানো স্ত্রীর পরিচয়। ওই মহিলার নাম নার্গিস আক্তার নদী। তিনি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গোজাদিয়া ইউনিয়নের টামনী ইসলামপুর গ্রামে তাঁর মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে থাকেন। তাঁর ১৩ বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। পেশায় হোমিও ডাক্তার। জেলার তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের চরতালজাঙ্গা সরকঘাটা এরাকায় মা-ফুলেশ্বরী হোমিওহল নামে একটি ওষুধের দোকানের প্রোপ্রাইটর তিনি।
এ বিষয়ে ওই ভুয়া স্ত্রী নার্গিস আক্তার নদীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখন কোনো কথা বলতে রাজি না। পরে এ বিষয়ে কথা বলব।’
কিশোরগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ ব্যাপারে জমির মূল মালিক মার্জিয়া খানমের ছেলে জোবাইদুল ইসলাম আকিব, গত ১৬ আগস্ট কিশোরগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে অভিযুক্ত দলিলগ্রহীতা একেএম সেলিম ভূইয়ার সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই দলিলটা অন্য একজন মহিলাকে স্ত্রী বানিয়ে আমি গোপনে করেছিলাম। এখন যেহেতু প্রকাশ হয়ে গেছে, এখন মীমাংসা করে ফেলব।’
বিতর্কিত দলিলটির বিষয়ে দলিল সম্পাদনকারী ফারুক আহমেদ বাবুর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফুরকান উদ্দিন খান মানিক বলেন, ‘দলিলটির বিষয়ে ইতিমধ্যে সাব রেজিস্ট্রার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমিও এর কপি পেয়েছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলিল লেখকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় জাতীয় পরিচয়পত্র অন্যজনের ছবি জুড়ে দিয়ে এমন দলিল কীভাবে হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে সদর সাব রেজিস্ট্রার মো. লুৎফর রহমান মোল্লা বলেন, ‘অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রারকে জানানো হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে সব বলা যাবে।’
জেলা রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আবু তালেব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত বুধবার সকালে সাব রেজিস্টারের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগটি পেয়েছি। এখানে যদি কোন সরকারি আইনের ব্যত্যয় ঘটে থাকে তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে, এ দলিল রেজিস্ট্রি করায় অফিশিয়াল যাঁরা জড়িত তাঁদেরসহ দলিল লেখকের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’