নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ধর্ষণ বিরোধী গ্রাফিতি আঁকায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কার প্রশাসনিক দুরভিসন্ধির ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, চলমান আন্দোলন দমন করতেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন নিপীড়নমূলক সিদ্ধান্ত। তাঁরা দুই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ ও মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে জাবিতে একটি আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলনে একটি দেয়ালচিত্র আঁকায় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাও করেছে।
শাহবাগে সমাবেশে বক্তব্য দেন— জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মাসুদ ইমরান মান্নু, প্রাক্তন শিক্ষার্থী মনি জামান, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, সোহেল জাফর, পাভেল পার্থ, কল্লোল বণিক, অনিন্দ্য আরিফ, মাহি মাহফুজ, সৌমিত জয়দ্বীপ, সিনা হাসান, তন্ময় ধর, দীপাঞ্জন সিদ্ধান্ত, কাব্য কৃত্তিকা, অলিউর সান প্রমুখ।
বক্তারা আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনার দেয়ালে সমকালীন বিষয় ও আন্দোলন–সংগ্রামের বক্তব্য তুলে ধরে বিভিন্ন সময় গ্রাফিতি আঁকার রেওয়াজ আছে। ক্যাম্পাসে কোনো গ্রাফিতি পুরোনো হয়ে গেলে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সেখানে নতুন গ্রাফিতি বা দেয়াল লিখন করা খুবই সাধারণ ঘটনা। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্র ইউনিয়ন ক্যাম্পাসে চলমান একটি যৌক্তিক ও স্পর্শকাতর আন্দোলনের অংশ হিসেবে নতুন কলা ভবনের দেয়ালে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি অঙ্কন করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলন দমনের হাতিয়ার হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কথিত অবমাননার অভিযোগ তুলে এই অন্যায় বহিষ্কার আদেশ দিয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, অভিযোগ গঠন থেকে বহিষ্কারাদেশ ঘোষণা পর্যন্ত সময়কালে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কারণ দর্শানো ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তড়িঘড়ি বহিষ্কার করার মধ্যেই এক ধরনের প্রশাসনিক দুরভিসন্ধির ইঙ্গিত রয়েছে।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে বহিষ্কারাদেশ ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনের দেয়ালে আঁকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে একটি ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখার নেতা–কর্মীরা। ব্যঙ্গচিত্রে একটি নারীর অবয়ব, ছয়টি মাথার খুলিসহ একটি পতাকা আঁকা হয়। এর পাশেই লেখা হয় ‘ধর্ষণ ও স্বৈরাচার থেকে আজাদী’।
এই ব্যঙ্গচিত্রে থাকা নারীর অবয়বের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আগের প্রতিকৃতি মুছে ফেলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।