Ajker Patrika
হোম > সারা দেশ > ঢাকা

নদী বাঁচাতে প্রয়োজনে দু–চারটা শিল্পকারখানা বন্ধ হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা

গাজীপুর প্রতিনিধি

নদী বাঁচাতে প্রয়োজনে দু–চারটা শিল্পকারখানা বন্ধ হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
গাজীপুরে ‘নদী রক্ষায় যুব সম্মেলন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নদীগুলোকে ভাগাড়ে পরিণত করার অধিকার কোনো শিল্পমালিকদের দেওয়া হয়নি। নদী বাঁচাতে প্রয়োজনে আমরা দু–চারটা শিল্পকারখানা বন্ধ করে দেব—এমন মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, ‘নদীকে একটি সুন্দর প্রাণব্যবস্থা হিসেবে দেখতে হবে। আমরা কি নদীর সৃষ্টি করতে পারি? যদি সৃষ্টি করতে না পারি, তাহলে কেন ধ্বংস করি। নদীগুলোকে ভাগাড়ে পরিণত করার অধিকার কোনো শিল্পমালিকদের দেওয়া হয়নি। বিশ্বের কোথাও কোনো দেশে কোনো মালিককে এই অধিকার দেওয়া হয়নি।

তার ব্যবসায়িক লাভের জন্য বর্জ্য নদীতে ফেলার লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। অনেক কিছুর বিকল্প তৈরি করা যায়, কিন্তু নদীর বিকল্প তৈরি করা সম্ভব নয়। প্রকৃতির সঙ্গে কখনো লড়াই করতে নেই, প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে জিততে পেরেছে—এ রকম কোনো ইতিহাস নেই। নদী বাঁচাতে প্রয়োজনে আমরা দু–চারটা শিল্পকারখানা বন্ধ করে দেব।’

আজ শনিবার গাজীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বন ও পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। পরে তিনি নগরীর পিটিআই অডিটরিয়ামে ‘নদী রক্ষায় যুব সম্মেলন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

৫ আগস্টের পরে গাজীপুরে অবৈধ দখল হওয়া ৯০ একর বনভূমির মধ্যে ১৬ একর ইতিমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘জেলা প্রশাসকদের বনের সীমানা নির্ধারণের কাজ দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ দখলদারেরা যত প্রভাবশালীই হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বনভূমি ও পরিবেশ সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৃক্ষনিধন ও শিল্পকারখানার দূষণ বন্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘বন দখলকারীদের প্রতিরোধ করতে কীভাবে কাজ করতে হয় তা আমরা জানি। আগামী তিন মাসের মধ্যে দখল হওয়া জমি উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে সব দিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নবায়নের সময় জনগণের মতামত নিতে হবে।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা নদী অনেকগুলো কারণে দূষণ করি। তার মধ্যে তিনটি বড় কারণে বেশি দূষণ হয়। একটি হচ্ছে শিল্পদূষণ, সিটি করপোরেশন-পৌরসভার বর্জ্য ও কারখানার পয়োবর্জ্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্লাস্টিক দূষণ।’

সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যত যাতায়াত করে তার অর্ধেকের বেশি নদীপথে যাতায়াত করে। এখনো মরে যাওয়া, দখল হওয়া নদীগুলো আমাদের যাতায়াতে ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। আমাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের কারণে জলবায়ুর মতো ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখে তরুণ প্রজন্ম। আগামী প্রজন্ম, যাদের জন্য আমরা গাড়ি-বাড়ি করি, টাকা জমাই, সেই আগামী প্রজন্মই ভয়ংকর সমস্যার সম্মুখীন হবে। পরিবেশের যে বিরূপ প্রভাব সেটির কবলে পড়বে।

‘আগামী প্রজন্মকে যদি একটি দূষণমুক্ত নদী না দিতে পারি, তাহলে ওরা পানি পাবে কোথায়, মাছ পাবে কোথায়? মাছই যদি না পায় তাহলে ওরা মাছে-ভাতে বাঙালি না হয়ে ফার্মের মুরগি আর ভাতে বাঙালি হবে!’

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘এই প্লাস্টিকগুলো নদীতে পড়ে। ফলে কোনো কোনো নদীতে তিন থেকে ছয় মিটার পর্যন্ত প্লাস্টিকের আস্তর পড়ে যায়। যেগুলো আর পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। একটি প্লাস্টিকে যে পরিমাণ কেমিক্যাল দেওয়া হয়, কিন্তু রিসাইকেল করার সময় কেউ চিন্তা করে না যে এই কেমিক্যালগুলো কী হবে। এই প্লাস্টিকগুলো নদীতে গিয়ে ভেঙে ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিক হয়। এই প্লাস্টিকগুলো মাছ খায়। পরে এসব আমাদের রক্তে ও মায়ের দুধে মিশে যায়। এগুলোকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

পলিথিনের ব্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে অনেকেই বলে প্লাস্টিকের ব্যাগ তো এখনো বন্ধ হয়নি। আমি বলি, আপনি যখন বাজারে যান দোকানদার যখন আপনাকে পলিথিন ব্যাগ দেয়, আপনি ওটা নেন। আপনি ক্রেতা হিসেবে বলেন, এটা নিব না, এটা নিষিদ্ধ ’২২ সাল থেকে। আপনার বাপ–দাদারা চটের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতেন। আপনি কেন বাসায় থেকে একটি চটের ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছেন না।’

ক্রেতাদের বলতে হবে, ‘আমরা এটি নেব না। দোকানদার দিতে চাইলেও ক্রেতারা যদি না নেয়, তাহলে অনেকটা রোধ হবে। ক্রেতাদের প্লাস্টিক ব্যবহারের অভ্যাস হয়ে গেছে। আপনারা দোকানদারদের বলেন, এটা শুধু নিষিদ্ধ তা-ই নয়, এটি আমার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সরকার এই পলিথিন সরানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এখন কথা হচ্ছে, ক্রেতাদেরও সচেতন হতে হবে। তরুণ প্রজন্ম হিসেবে আপনি প্লাস্টিকে বর্জন করুন, এটি ব্যবহার বন্ধ করে দিন, পরিবর্তন চাইলে আগে আমাদের সবাইকে পরিবর্তন হতে হবে।’

নতুন প্রজন্মদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, ‘উন্নয়নটাকে নতুন প্রজন্মকে নতুনভাবে দেখতে হবে। আমাদের বাতাস পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বাতাস। আমাদের নদীগুলো দূষণের মধ্যে অন্যতম। যে উন্নয়ন আপনার বাতাসকে দূষিত করে, আপনার নদীকে মেরে ফেলে, যে উন্নয়ন আপনার কৃষিজমি কেড়ে নেয়, আপনার মায়ের দুধের সঙ্গে মাইক্রোগ্রাম মিশে যায়।

‘সে উন্নয়ন আসলে উন্নয়ন নয়। আমাদের দেশে একটু সময় এসেছে উন্নয়নকে নতুনভাবে দেখার। আমরা বড় বড় শপিং মল ফ্লাইওভারকে উন্নয়ন কথা বলেছি। আপনারা তা বলবেন না। আপনাদের উন্নয়নের সংজ্ঞায় দূষণমুক্ত প্রবহমান নদী থাকবে, আপনাদের উন্নয়নের সংজ্ঞায় বন থাকবে, বন্য প্রাণী থাকবে।’

প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের ভার্চুয়াল বক্তব্য দেন গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট সেন্টার মালয়েশিয়ার ম্যানেজার ড. কালিদাসান কালিসাম।

আরও বক্তব্য দেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান, জেলা পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিচার্স সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, বাংলাদেশ কাটার সাকশন ড্রেজার ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বশির আহমেদ, বাংলাদেশ বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনের সভাপতি রাশেদুল করিম মুন্না, ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা পরিচালক ড. সোহরাব হোসেন প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন।

ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বাস উল্টে খাদে, নারী নিহত

রাখাল রাহার বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা, তদন্তে সিআইডি

কেয়া গ্রুপের দুই কারখানার ২২০০ শ্রমিক ছাঁটাই, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

আন্দোলন প্রত্যাহার করে রাজধানী ছাড়ছেন প্রাথমিকের ৬৫৩১ শিক্ষক

অর্থ পাচার মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা বরখাস্ত

সাভারে রোজায় কর্মঘণ্টা কমানোর দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

মৃত্যুর আগপর্যন্ত আর রাজনীতি করবেন না: আদালতকে বললেন কামাল মজুমদার

রাজধানীতে আবাসিক হোটেলে আগুন, ৪ জনের লাশ উদ্ধার: ফায়ার সার্ভিস

সালমান-আনিসুল-কামরুলসহ ৬ জন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার

টঙ্গীতে কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার